বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকটে জর্জরিত। ঋণ কেলেঙ্কারি, টাকা পাচার ও লুটপাটের মতো কর্মকাণ্ড শুধু আর্থিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করেনি, বরং জনগণের আস্থা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সামপ্রতিক তথ্য বলছে, খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, যা ব্যাংকগুলোর আয়যোগ্য সম্পদ কমিয়ে দিচ্ছে এবং আর্থিক সূচকগুলোকে ক্রমশ নেতিবাচক ধারায় ঠেলে দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কয়েক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করতে পারছে না, আয় কমছে, আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে যেসব ব্যাংক তুলনামূলকভাবে লুটপাট থেকে রক্ষা পেয়েছে, তারা এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এই বৈষম্য প্রমাণ করে যে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ব্যাংক খাতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। অর্থনৈতিক সংকটকে আরও জটিল করেছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজস্ব আহরণের দুর্বলতা। ব্যবসা-বাণিজ্যে কাঙ্ক্ষিত গতি ফিরছে না, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ছে। ফলে সরকারকে রাষ্ট্রপরিচালনায় ক্রমাগত ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে আবারও নতুন ঋণ নিতে হচ্ছে, যা এক ধরনের দুষ্টচক্র তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বৈদেশিক ঋণ গত এক দশকে তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। প্রথমত, ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাঁদের প্রভাবমুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে কার্যকর কৌশল গ্রহণ জরুরি- যেমন ঋণ পুনর্গঠন, সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা। তৃতীয়ত, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।