সুদের টাকা দিতে না পারলে গহনা ভেঙ্গে বিক্রি করব পারলে ঠেকান

এফএনএস (আঃ লতিফ মোড়ল; ডুমুরিয়া, খুলনা) : | প্রকাশ: ২২ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম
সুদের টাকা দিতে না পারলে গহনা ভেঙ্গে বিক্রি করব পারলে ঠেকান

শাপলা জুয়েলার্স। খুলনার ডুমুরিয়ার শাহপুর বাজারে অবস্থিত। মালিক নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় ডাকসাইটের নেতা আব্দুল হালিম গাজী জুয়েলার্সটির মালিক। জুয়েলারি ব্যবসা হলেও সেখানে স্বর্ণের কোন গহনা দেখা যায়নি। রয়েছে বিভিন্ন ফাইল পত্র ভর্তি আলমারি শোকেস। তার ব্যবসা বন্ধকী। নিজেই সুদের হার ও বন্দকী নিয়ম উল্লেখ করে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে চড়া সুদে তিনি স্বর্ণের গহনা, জমি বন্ধক রেখে টাকা দেন। তবে মেয়াদ শেষ হলে বা প্রতিমাসে সুদের টাকা দিতে না পারলে তিনি সে সব গহনা বিক্রি করে দেন। বিগত ১৬ বছরে এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি বেপরোয়া। সরকারি জমিতে তৈরি করছেন ৪ তলা ভবন। শুধু তাই বাজারের পাশেই রয়েছে স্টার ও মুন নামে দুটি আলিশান বাড়ি।

সরজমিনে গিয়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল হালিম গাজী ক্ষমতার প্রভাব  খাটিয়ে শাহাপুর বাজারে পিছনের অংশে  জেলা পরিষদ ও সামনের অংশে সড়কের জমির উপর একটি ৪তলা ভবন নির্মাণ করেন। কিন্তু তিনি এভাবে সরকারি জমির উপর ভবন নির্মাণ করলেও সে সময় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওযামী লীগের নেতা অবৈধভাবে সরকারি জমিতে  ৪তলা ভবন কিভাবে নির্মাণ করলো সেটাই আমরা ভেবে পাচ্ছি না বলে জানান স্থানীয়রা।

এ সব বিষয়ে  মোঃ হালিম গাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে রুঢ় আচরণ করেন। তিনি সাংবাদিকদের পরিচয় পত্র দেখতে চান। এক পর্যায়ে মারমুখি আচরণ করেন। তিনি বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তার কারবার চলে। কেউ কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। বন্ধকী স্বর্ন বা অন্য সম্পদ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুদের টাকা ঋণ গ্রহিতাকে সময় মত পরিশোধ করতে হবে না হলে ওটা আমি বিক্রি করে নিজের টাকা তুলে নেই। আমি তো জনসেবা করতে বসিনি। আপনাদের কোন ক্ষমতা থাকলে করেন। আর পেপার পত্রিকায লিখলে কিছু হয় না। প্রশাসন আমার হাতের মুঠোয় থাকে।  তাদেরকে ম্যানেজ করেই আমি ব্যবসা করি।

শাহপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আবু জাফর  জানালেন, শাপলা জুয়েলার্সের মালিক মোঃ হালিম গাজী বন্ধকী ব্যবসা করেন। অনেকের গহনা বিক্রি করে দেন এমন অভিযোগ আমরাও শুনেছি। এ ছাড়া বাজারের সরকারি জমিতে তার ভবন নির্মাণের অভিযোগ স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে সত্যতা পেয়েছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, আমি মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেখতে গিয়েছিলাম। এরপর তৎকালিন উপজেলা নির্বাহি অফিসার  মুহাম্মদ আল আমিন স্যারের নির্দেশে ওই জমি মাপজোপ করে সরকারের সম্পত্তি পাওয়া গেছে। তাদেরকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছি। তাছাড়া সরেজমিন তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহি অফিসার মুহাম্মদ আল অমিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, কোন ব্যক্তি সমস্যায় পড়ে যদি স্বর্ন বা জমি বন্দক রাখে সেটার একটি নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালার বাইরে কিছু করা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে কারও ভবন নির্মাণের অধিকার নেই। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে