সিলেটে জব্দ করা বালুর বাজারদর যেখানে ঘনফুটে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, সেখানে সরকারি নিলামে একই বালু প্রতি ঘনফুট ‘মাত্র দুই টাকা’ ধরে বিক্রি করা হয়েছে-এমন অভিযোগ সামনে আসতেই জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। শুধু কম দামে বেচাকেনাই নয়, নিলামের কাগজপত্র ব্যবহার করে আবারও বালু উত্তোলনের প্রস্তুতিও চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় প্রশাসনের কেউই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। অভিযোগ রয়েছে, সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কয়েস আহমদ-এর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পরিস্থিতি নীরব থেকে গেছে। নিলামে অংশ নিতে না পারা এক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে দুদকে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন।
ইতিহাসে ‘শায়েস্তা খাঁর আমল’-এ পণ্যদ্রব্যের অস্বাভাবিক কম দাম নিয়ে প্রচলিত কাহিনি রয়েছে; সিলেটের এই নিলাম সেই কাহিনিকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই। বাজারে যে বালু ৫০ থেকে ৭৫ টাকা ঘনফুট দরে বিক্রি হয়, সরকারি নিলামে সেই বালুর দর নেমে এসেছে দুই টাকায়। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে জব্দ করা মোট ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ এবং ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৯ ঘনফুট বালুর নিলাম ডাক হয় ১৯ নভেম্বর। প্রায় ১৩ কোটি টাকার বালুর নিলামে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ৯ জন ব্যবসায়ীর, কিন্তু উপস্থিত ছিলেন কেবল একজন-কয়েস আহমদ। আগের বিজ্ঞপ্তিতে সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ৯ টাকা ৫০ পয়সা, দ্বিতীয় দফায় তা নেমে আসে ৭ টাকা ৬০ পয়সায়, আর শেষ পর্যন্ত দাম স্থির হয় দুই টাকার কাছাকাছি-যা নিলাম সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে ‘অস্বাভাবিক এবং বাজারদরবহির্ভূত।’
নিলাম সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, নিলামপত্র দ্রুত কার্যকর করতে ক্রেতা ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই সময়সীমা পেলে নিলামকৃত বালু অপসারণের আড়ালে আরও প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বালু উত্তোলনের সুযোগ তৈরি হবে, ফলে সরকারের ক্ষতির অঙ্ক বাড়তে পারে অর্ধশত কোটি টাকায়। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ফুট বালু ২ টাকা!’, ‘১৩ কোটি টাকার বালু ৩৮ লাখে!’-এমন স্ট্যাটাসে ক্ষোভ জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা। এ বিষয়ে নিলাম কমিটির দায়িত্বে থাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ফাইজুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। অন্যদিকে কয়েস আহমদ দাবি করেছেন, কাগজে ২২ লাখ ঘনফুট দেখানো হলেও বাস্তবে সেখানে আছে মাত্র ছয়-সাড়ে ছয় লাখ ঘনফুট বালু, এবং তিনি নিয়ম মেনেই টেন্ডার পেয়েছেন। তবে তাঁর দাবি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।