ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সম্মানী ভাতা চালুর পরিকল্পনার কথা জানালেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ইমাম ও খতিব জাতীয় সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে পর্যায়ক্রমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্মেলনে তারেক রহমান জানান, সারা দেশে ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিনরা যে নৈতিক ও আত্মিক শিক্ষা দিয়ে সমাজকে পথ দেখাচ্ছেন, সেটি রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অনেকেই আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে দায়িত্ব পালন করলেও তাদের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা থাকা উচিত। তিনি মনে করেন, সমাজ সংস্কারের ভূমিকা পালনকারী এই ধর্মীয় দায়িত্বশীলদের প্রতি মাসে নির্দিষ্ট ভাতা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
তিনি জানান, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিভিন্ন বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণের চিন্তাভাবনাও বিএনপির রয়েছে। মসজিদ কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর ইমাম-মুয়াজ্জিনদের চাকরি নির্ভর করাকে তিনি অন্যায্য বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার্ভিস রুল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের ৫০ হাজারের বেশি মাদরাসা, প্রায় সাড়ে সাত লাখ মসজিদ এবং প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনকে উন্নয়ন কার্যক্রমের বাইরে রেখে টেকসই অগ্রগতি অর্জন সম্ভব নয়। তিনি আলেম সমাজের উপস্থাপিত বিভিন্ন দাবির প্রসঙ্গে বলেন, যেসব দাবি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে হয়, দল সেগুলো বিবেচনায় নেবে। একই সঙ্গে দাবির যথাযথ সুপারিশ লিখিত আকারে পেলে তা বাস্তবায়নে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতীয় ঐক্যের প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ইসলামের মূল নীতি নিয়ে মুসলিম সমাজে কোনো বিভেদ নেই। তবে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় ব্যাখ্যা উপস্থাপন করলে তা রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্যে বলেন, মতবিরোধ যেন কখনো ফেৎনার জন্ম না দেয়, এটি নিশ্চিত করতেই ওলামা-মাশায়েখদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সম্মেলনে দেশের ইতিহাস, সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতির অবস্থান নিয়েও বক্তব্য রাখেন তিনি। স্বাধীনতার পর সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন এবং আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের উপস্থাপনাকে বিএনপির আদর্শিক অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ। ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে বাংলাদেশ গড়তে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন ও ওলামা সমাজের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন তিনি।
সভায় সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, সদস্যসচিব মুফতি আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। প্রায় তিন হাজার ইমাম-খতিব এতে অংশ নেন।