বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ২০২৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব ব্যাংক, এমএফএস, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থায় যুক্ত হবে। এ ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে ক্যাশ আউটের প্রয়োজনীয়তাও কমে যাবে। রোববার ২৪ নভেম্বর রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
এই ঘোষণার পেছনে রয়েছে দেশের বর্তমান ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক বছরে ইন্টারঅপারেবল পেমেন্ট সিস্টেম চালু করলেও তা সফল হয়নি। গভর্নর বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়নি, ফলে ব্যবস্থাটি কার্যকর হয়নি। মোবাইল ব্যাংকিং, বিনিময় বা কিউআর কোড—কোনোটিরই প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০২৭ সালের জুলাই থেকে যে নতুন আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা চালু হবে, সেটি গেটস ফাউন্ডেশনসমর্থিত মোজোলুপের সহযোগিতায় তৈরি করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও মোজোলুপের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল চুক্তি সই হয়। নতুন প্ল্যাটফর্মটির নাম হবে ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম বা আইআইপিএস। গভর্নর বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম চালু হলে ব্যাংক থেকে এমএফএস, এমএফএস থেকে বীমা বা ব্যাংক থেকে ব্যাংক—সব লেনদেন একই কাঠামোর আওতায় আসবে, লেনদেন হবে আরও দ্রুত ও নিরাপদ।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, ডিজিটাইজেশনে স্বচ্ছতা বাড়ে, দুর্নীতি কমে এবং রাজস্ব আদায়ও বাড়ে। তাঁর ভাষায়, ক্যাশলেস অর্থনীতি ভবিষ্যতের পথ এবং এজন্য সব প্রতিষ্ঠানকে একই চ্যানেলে আনাই এখন প্রধান লক্ষ্য।
গেটস ফাউন্ডেশনের ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমস বিভাগের বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড নিসিগ্ধা আলী বলেন, গেটস ফাউন্ডেশন কেবল অর্থায়ন করে, নীতি বা পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করে না। তাঁর মতে, কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো ব্যবসায়িকভাবে এটি লাভজনক মনে না করায় আগের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক শারাফত উল্লাহ খান বলেন, প্রতিযোগিতা বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই লেনদেন খরচ কমবে। প্রয়োজনে গ্রাহক পর্যায়ে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, আইআইপিএস চালুর পর রিকশাচালক থেকে খুচরা দোকানি, ব্যবসায়ী থেকে করপোরেট—সবাই এক প্ল্যাটফর্মে এসে সহজ, দ্রুত এবং কম খরচে ডিজিটাল লেনদেন করতে পারবেন।