বাউলশিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তার ও মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাষ্ট্রচিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা মানে আমাকে গ্রেপ্তার করা। সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেন, এ ঘটনার দায় সরকার এড়াতে পারে না এবং আন্দোলন থেমে থাকবে না।
এই সমাবেশটি আয়োজন করে সাধুগুরুভক্ত ও ওলি আওলিয়া আশেকান পরিষদ, যেখানে আবুল সরকারের নিঃশর্ত মুক্তি এবং মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, ঘিওর উপজেলার এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় বৃহস্পতিবার আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রোববার তার অনুসারীরা প্রতিবাদ জানাতে গেলে আলেম ও তৌহিদী জনতার ব্যানারধারী একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়।
ফরহাদ মজহার বলেন, আবুল সরকার শুরু থেকেই বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, এই গ্রেপ্তার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তার ভাষায়, পাঁচ আগস্টের পর দেশে এক নতুন ধরনের ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আগে যে ফ্যাসিবাদ ছিল তা নিজেকে সেক্যুলার বা জাতীয়তাবাদী বলত, এখন ধর্মের নামে সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে। তার দাবি, এই ধারার কাছে দেশকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, লালন শাহকে জাতীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল জাগতিক সংস্কৃতি রক্ষার অঙ্গীকার হিসেবে। কিন্তু আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করে সেই অবস্থান সরকার নিজেরাই কলঙ্কিত করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, তাকে ফোন করে বলা হয়েছিল আবুল সরকারকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন মামলা না দিতে। কিন্তু সেই কথা রাখা হয়নি। তার অভিযোগ, এই ঘটনায় প্রশাসনের একটি অংশ এবং লুটেরা শ্রেণির প্রভাব রয়েছে।
সমাবেশে ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ঘোষণাও দেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের সব দরবার, খানকাহ এবং আখড়া এক হয়ে বাউল ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই চালাবে। তিনি ঘোষণা দেন, প্রথমে শহীদ মিনারে দিন-রাত অবস্থান এবং পরে মানিকগঞ্জে মহাসম্মেলন করা হবে। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে যারা বাউলদের পেটাচ্ছেন, আমি সেখানে থাকব। চাইলে আমাকে পেটাতে পারেন। বাউলদের ওপর সহিংসতা তিনি ইসলামের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন।
সমাবেশে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশেও তিনি কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি বা জামায়াত, কেউ যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না পারে, জনগণ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে না। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল মজলুমের লড়াই। আজ যদি নিরীহ সাধুসন্তদের পাশে না দাঁড়ানো হয়, জনগণও ক্ষমা করবে না।
সমাবেশে বক্তব্য দেন আবুল সরকারের স্ত্রী আলেয়া বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, যারা তাদের ছেলেদের ওপর হামলা চালিয়েছে তারাই আবার উল্টো থানায় অভিযোগ করেছে। তিনি বলেন, তিনি থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ গড়িমসি করেছে এবং হামলাকারীদের প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছে।
বক্তারা আরও দাবি করেন, গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর মাজার ভাঙার ঘটনায় সতর্ক করা হলেও সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। আবুল সরকারের গ্রেপ্তার এবং তার অনুসারীদের ওপর হামলা সেই ব্যর্থতার প্রতিফলন। সমাবেশে আরিফ রহমান, শাহীন সরকার, সুফি বেলাল নুরী, তৌহিদুল ইসলাম, আবদুল মজিদ, মঞ্জুরুল হক, শাকিরা পারভীন, অস্টিক আরজু, মুনতাসির রহমান এবং ইব্রাহিম মিয়া বক্তব্য দেন।