ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে গত মাসে হওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নাশকতা ছিল না। তদন্ত প্রতিবেদনে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটকে আগুনের মূল উৎস হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) তদন্তকারী দল প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন প্রথম ছড়ায় কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর পণ্যের স্তূপ থেকে। দাহ্য পণ্য রাখা ছিল লোহার তৈরি ৪৮টি ছোট খাঁচার মতো অফিস এলাকায়। সেখানে অগ্নি–নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না। ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর, স্প্রিংকলার কিংবা হাইড্রেন্ট কিছুই কার্যকর ছিল না, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে জানান, “এটা কোনো নাশকতা ছিল না। বৈদ্যুতিক আর্কিং এবং শর্ট সার্কিটের কারণেই আগুন লাগে। কুরিয়ার শেডের বর্ধিত অংশের উত্তর পশ্চিম কোণে পাশাপাশি থাকা কয়েকটি খাঁচার মধ্যবর্তী স্থানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।” তিনি জানান, ৯৭ জন সাক্ষীর লেখা ও মৌখিক জবানবন্দি প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে তুরস্ক থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, অগ্নিনির্বাপক বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডি ফরেনসিক কর্মকর্তাদের মতামতও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আগুন লাগার পর ১৮ অক্টোবর দুপুরে পুরো কার্গো ভিলেজজুড়ে মুহূর্তেই কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। ৮ নম্বর গেটের দিক থেকে উঠতে থাকা ধোঁয়া পাঁচ ছয় কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিটসহ বিমান, সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণে অংশ নেয়। প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় সাময়িক সময়ের জন্য বিমান ওঠানামাও বন্ধ রাখতে হয়।
তদন্ত কমিটি আরও জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে কার্গো ভিলেজ এলাকায় সাতটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা খুবই সীমিত থাকায় এমন ঘটনা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, বিমানবন্দরের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানো এবং অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি স্বতন্ত্র অপারেটর কর্তৃপক্ষ গঠনের। সিভিল এভিয়েশন কেবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে ঝুঁকি কমবে এবং ব্যবস্থাপনাও হবে আরও শক্তিশালী।