কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন, পুড়ল দেড় হাজার ঘর, খোলা আকাশের নিচে শত শত পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম | প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম
কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন, পুড়ল দেড় হাজার ঘর, খোলা আকাশের নিচে শত শত পরিবার

কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তেই ছাই হয়ে গেছে দেড় হাজারের মতো ঘরবাড়ি। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা বেজে বাইশ মিনিটে আগুন লাগার পর দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে রাত দশটা বত্রিশ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় হতাহতের খবর না মিললেও ঘরহারা মানুষজন রাতেই রাস্তায় ও খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুন লেগে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বউবাজার অংশে। প্রথমে কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও যানজটের কারণে তাদের পৌঁছাতে সময় লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের মোট উনিশটি ইউনিট যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে। সরু গলি আর জনসমাগমের কারণে গাড়িগুলো ভেতরে যেতে না পারায় দূর থেকে পাইপ টেনে পানি ছিটাতে হয়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন লাগার সময় অনেক ঘরেই গ্যাস সিলিন্ডার ছিল এবং যত্রতত্র বিদ্যুতের তার ঝুলে থাকায় আগুন দ্রুত ভয়াবহ রূপ নেয়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্নভাবে কথা বলে তারা জানতে পেরেছেন প্রায় পনেরো শো ঘর-বাড়ি পুড়েছে। তাঁর ভাষায়, সরু রাস্তা, যানজট আর পানির উৎসে সীমাবদ্ধতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। আগুনের উৎস নিয়ে তিনি বলেন, তদন্ত ছাড়া কারণ নিশ্চিত করা যাবে না।

বস্তিবাসীর আর্তনাদে আগুনের পর পুরো এলাকা ভারি হয়ে ওঠে। কেউ সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে বের হতে পারলেও বেশিরভাগ বাসিন্দার ঘরবাড়ি পুড়ে একেবারে শূন্য হয়ে গেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এক নারী বলেন, সাত বছর ধরে এই বস্তিতে থাকেন তিনি। কিস্তিতে কেনা সব জিনিস চোখের সামনে পুড়ে যাওয়ায় এখন তাঁর পথে বসার অবস্থা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, গৃহহীন হয়ে পড়া পরিবারগুলোর দুঃখ সবার জন্য কষ্টের। সরকার পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেবে। পাশাপাশি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানান তিনি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আগুন একের পর এক লাগার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠে আসে বিভিন্ন পক্ষ থেকে।

রাতে সরেজমিন দেখা যায়, বস্তিবাসীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। কেউ গোছানোর মতো কিছুই পাননি। কেউ আবার শেষ মুহূর্তে মূল্যবান সামগ্রী বের করার চেষ্টা করছেন। লাভলী বেগম নামের এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর সবকিছু পুড়ে গেছে। বাড়িতে থাকা টিভি আর ফ্রিজসহ সব জিনিস কিস্তিতে কেনা, এখন কীভাবে শোধ দেবেন বুঝতে পারছেন না।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, শীত মৌসুমে আগুন লাগার ঘটনা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। কয়েক দিন আগেই কড়াইল বস্তিতে মহড়া হয়েছিল, যার কারণে আগুন নেভাতে আরও বড় বিপর্যয় এড়ানো গেছে বলে মন্তব্য করেন কর্মকর্তারা। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত শেষে জানানো হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে