কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলে চলমান অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান

এফএনএস (মোঃ হাবিবুর রহমান খান; কুমিল্লা) : | প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:১২ পিএম
কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুলে চলমান অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান

কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুলের চলমান অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বুধবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)  আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে শিক্ষকরা।

জানা যায়- কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুল কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড তথা বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সেরা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে একটি। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষায় অত্র বিদ্যালয় থেকে উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সাথে পাস করে থাকে। জিপিএ ৫.০০ এর প্রাপ্তির দিক থেকে এটি একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। গত ৫ই আগাস্ট ২০২৪ ইং তারিখে দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় অনুপস্থিত রয়েছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে  নুসরাত জাহানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক  নুসরাত জাহান এর প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়ে কতিপয় খন্ডকালীন শিক্ষক মোঃ আরিফুর রহমান, মোঃ আবু তাহের, মোসাঃ নাজমা আকার গং বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করে ক্ষেত্র বিশেষ মব সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাশাপাশি তারা বিদ্যালয়ের অনেক আর্থিক অনিয়মের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন।

বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়-  ২০২৪ সালে প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা সর্বমোট ২২ লক্ষ ৪৮হাজার ৪শত ২৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে মাত্র ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার ৩৭৬ টাকা শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে পরীক্ষার সম্মানী বাবদ বন্টন করা হয় এবং অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদ্বয়ের সম্মানী বাবদ-৬৫ হাজার টাকা বন্টন করা হয়। অবশিষ্ট ৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৫০ টাকা টাকার কোন হিসাব কিংবা হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ২০২৪ সালের ৬ষ্ঠ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন  ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৪০ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে ৮৩ হাজার ২৮ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৫১ হাজার ৬১২ টাকা এবং ২০২৪ সালের ৮ম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন ফি ১ লাখ ৪৭ হাজার সহ মোট ৩ লাখ ২৫ হাজার ১৬০ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে ১ লাখ ৪৬হাজার ৬২২ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণি মোট ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা এর মধ্যে কম্পিউটার অপারেটরকে দেওয়া হয়েছে-২৬ হাজার ৫০০ টাকা।  অবশিষ্ট ২ লাখ ৩ হাজার ৬৫০ টাকার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।

এদিকে ২০২৪ সালের ৯ম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন ফি ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে ৪ লাখ ৪১ হাজার ২৫২ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪৮ টাকার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ২০২৫ সালের এস.এস.সি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা-১২৬৫ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে-১২৫০ জনকে প্রবেশ বিতরণ করা হয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ২০২৫ সালের ৬ষ্ঠ শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ ২ লাখ ৪৩ হাজার১০০ টাকা টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে ২ লাখ ২ হাজার ২১৫ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৪০ হাজার ৮৮৫ টাকা এর মধ্যে কম্পিউটার অপারেটরকে দেওয়া হয়েছে-১০ হাজার ) টাকা এবং শ্রেণি শিক্ষকদেরকে দেওয়া হয়েছে-১০ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ২০ হাজার ৮৮৫ টাকা টাকার কোন হদিস পাওয়া যায়নি।  ২০২৫ সালের ৮ম শ্রেণির রেজিট্রেশন ফি  ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা শিক্ষার্থীদেরদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়। যার মধ্যে ৩ লাখ ০৩ হাজার ০০৬ টাকা  ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৭৩ হাজার ৪৯৪ টাকা  এর মধ্যে কম্পিউটার অপারেটরকে দেওয়া হয়েছে-১০ হাজার টাকা এবং শ্রেণি শিক্ষকদে দেওয়া হয়েছে-১০ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ৫৩ হাজার ৪৯৪  টাকার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সহ মোট ১২ লাখ দুই হাজার সাতাশ টাকা আত্মসাত করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান।

এ বিষয়ে শিক্ষকরা বলেন,  যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত থেকে মব সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এছাড়াও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে উনাকে বহিস্কারে করার দাবি জানান।  ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুসরাত জাহান বলেন- আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোন টাকা আত্মসাত করেনি।

 অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান- এই কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের  শিক্ষার মান ও শিক্ষকের মর্যাদা যেন ক্ষুন্ন না হয়ে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান ।  এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুলের  সিনিয়র শিক্ষক মফিজুর রহমান নিজামী,আব্দুল কাদের, মনিরুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে