রাজধানীতে বাড়িভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, কোন এলাকায় কত ভাড়া হতে পারে তার নির্দেশিকা তৈরি করা হবে। বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, নগর ভবনের অডিটোরিয়ামে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের অধিকার নিয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এই ঘোষণা আসে। ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নীতিমালা ও গাইডলাইন চূড়ান্ত করা হবে, যাতে নতুন বছর থেকে তা বাস্তবায়ন করা যায়।
প্রেক্ষাপট বলছে, ঢাকায় প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। জীবিকার প্রয়োজনে রাজধানীতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বাসার চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু ভাড়া নির্ধারণ, বাড়তি চার্জ, সুযোগসুবিধা কিংবা চুক্তিনামা—এসব বিষয়ে প্রায়ই ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার মধ্যে বিরোধ দেখা যায়। ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’ থাকলেও তা কার্যকর প্রয়োগ চোখে পড়ে না। ফলে ভাড়া বৃদ্ধির নিয়ম, কর পরিশোধ বা সেবা নিশ্চিতকরণে স্পষ্টতা নেই।
এই বাস্তবতায় ডিএনসিসির আলোচনায় উঠেছে কয়েকটি মূল প্রস্তাবনা। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বাড়িভাড়া বৃদ্ধিতে ট্যাক্স, মুদ্রাস্ফীতি ও বাস্তব সেবার মান বিবেচনায় স্পষ্ট নিয়মনীতির প্রয়োজন। পাশাপাশি একটি বাড়িতে মেস ভাড়ার জন্য নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ রাখা, ভাড়া বৃদ্ধির হার নির্ধারণ এবং এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ভাড়া কত হতে পারে তা সরকারিভাবে জানানো জরুরি। আলোচকরা মনে করেন, এতে বাজারে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ভাড়াটিয়া ও মালিক উভয়ের জন্যই ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে।
বৈঠকে ডিএনসিসির প্রশাসক এজাজ বলেন, “কোন এলাকায় কত ভাড়া হতে পারে, সর্বোচ্চ কত, সর্বনিম্ন কত, তার একটি নীতিগত গাইডলাইন আমরা দেব। স্থানীয় জমির দাম ও সেবা সুবিধা বিবেচনায় সম্ভাব্য ভাড়ার তালিকা প্রস্তুত করা হবে।” তিনি আরও জানান, বাড়িভাড়া আইন সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা থাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো হবে।
চুক্তিনামা নিয়েও নতুন উদ্যোগের কথা জানান প্রশাসক। তার ভাষায়, “ভাড়াটিয়া ও মালিকের এগ্রিমেন্ট কেমন হবে তার নমুনা ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে থাকবে। ওয়ার্ডভিত্তিক ভাড়াটিয়া ও মালিক সমিতি গঠন করতে হবে, যাতে উভয় পক্ষই তাদের অধিকার আদায় করতে পারে। প্রয়োজন হলে আঞ্চলিক কার্যালয়ে দুই পক্ষের আলোচনার সুযোগ থাকবে।”
বাড়ির নিরাপত্তা ও কমপ্লায়েন্স নিয়েও কঠোর অবস্থান জানায় সিটি করপোরেশন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, ভূমিকম্প সহনীয়তা এবং নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের বিষয়কে ভাড়া দেওয়ার যোগ্যতার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। প্রশাসক বলেন, “যে বাড়িতে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করা হয় না, সেখানে সেবা দেওয়া যাবে না।”
ঢাকার দীর্ঘদিনের ভাড়া–সংকট ও অনিয়ম কাটাতে ডিএনসিসির এই উদ্যোগকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। নির্দেশিকা প্রকাশের পর বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হয়, এখন সেদিকেই নজর।