মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বাড়ছে বিক্ষোভ প্রতিবাদ ও সহিংসতা

তানোর-গোদাগাড়ীতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও অস্বস্তিতে বিএনপির প্রার্থী

মো: ইমরান হোসাইন; তানোর, রাজশাহী | প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:১৩ পিএম
তানোর-গোদাগাড়ীতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও অস্বস্তিতে বিএনপির প্রার্থী
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বাড়ছে বিক্ষোভ প্রতিবাদ ও সহিংসতা। ফলে অস্থির ও অস্বস্তিতে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন রাজশাহী-১ আসনে এমপি হিসেবে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা। গত ৩রা নভেম্বর ২৩৭টি আসনের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে, এটি প্রাথমিক পর্যায়ের তালিকা। যে কোনো সময় যে কোনো আসনের প্রার্থীতা পরিবর্তন হতে পারে। কেন্দ্রীয় ভাবে এমন ঘোষণার আশ্বাসে এ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে জনসমাবেশ, মশাল মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ কিংবা বিক্ষোভের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি বুধবার ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যার পরে তানোর উপজেলা সদরের ডাকবাংলো মাঠ থেকে এক বিক্ষোভ মশাল মিছিল বের করে এ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা এ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেকের অনুসারী তানোর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সামশুল ইসলাম ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ন-আহবায়ক আতিকুর রহমানসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এমন খবরে শরীফ উদ্দিনের অনুসারী তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক এবং তালন্দ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান ও বিএনপির থেকে বহিস্কৃত নেতা তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের নেতৃত্বে থানা মোড় থেকে প্রতিবাদী বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা সদরের দিকে যায়। এসময় পৌরভবন সংলগ্ন গেটের সামনে মুখোমুখি আবস্থানে পরে হামলা পাল্টা হামলা শুরু হয়। মুহুর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি চলন্ত অটোগাড়ী ও ভ্যান। সেইসাথে বিআরডিপি অফিস ও ভূমি অফিসের রাস্তায় অগ্নি সংযোগ করে ভাংচুর চালানো হয়। অফিসের বাইরে এসিল্যান্ডের মটরগাড়ীও ভাংচুর করে তান্ডপ চালায় উভয়পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থরা। পরে তারেকের অনুসারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। কিন্তু তাৎক্ষণিক উপজেলা গেটের সামনে জড় হয়ে পাল্টা আক্রমণ করে সহিংসতা চালায়। এসময় আহত অবস্থায় বিএনপির এক কর্মীকে পৌরসভার গেটে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। এসময় উপজেলা সদরের অফিসপাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাবেক মেয়র মিজান ও তার লোকজন অন্যত্র লুকিয়ে পড়ে। তবে, ঘটনার চারদিন পরও কোন পক্ষের কেউ মামলা করেনি বলে জানান তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন। তানোর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমএ মালেক মন্ডল বলেন, দলীয় কর্মী হত্যার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র মিজানকে বহিস্কার করা হয়। এরপরও এ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রর্থী মেজর শরিফ সাহেব দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশে মিজানকে প্রধান বক্তার আসনে বসিয়ে অধিপত্ত্য বিস্তারে ভূমিকা রাখছেন। এজন্য তানোর-গোদাগাড়ীতে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বাড়ছে বিক্ষোভ প্রতিবাদ ও সহিংসতা। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ক্ষোভে আবেগে এ্যাডভোকেট তারেকের ওপর ভর করে তাকে বিএনপির মনোনয়ন পাইয়ে দেবার জন্য চেষ্টা চালচ্ছেন। কিন্তু তা কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পেয়েও কিছুটা অস্বস্তিতে বিএনপির প্রার্থী মেজর শরিফ সাহেব। এটা অচিরেই বিএনপির হাই কমান্ডকে সুরহা করতে হবে। নইলে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-১ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেকের অনুসারীরা মনোনয়ন বদলের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১ নভেম্বর শনিবার বিকালে তারেকের অনুসারীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এর আগেও একাধিকবার তারেক অনুসারীরা মহাসড়কে শুয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। তারেক অনুসারীদের দাবি- এ আসনে শরিফ উদ্দিন প্রার্থী থাকলে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মজিবুর রহমানের জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের আরও দাবি জেনারেল শরিফ আগে কোনোদিন রাজনীতিতে ছিলেন না। তিনি মাঠের রাজনীতি ভালো বুঝতে পারছেন না। প্রার্থী বদল হলে আসনটি বিএনপির ঘরে যাবে। তারাও এ বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাইছেন। তবে, এনিয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। এবিষয়ে জেনারেল শরিফের অনুসারী নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে শরিফ উদ্দিন একজন শক্তিশালী প্রার্থী। তাকে হটানো সহজ নয়। জেনারেল শরিফ গত দুই বছর ধরে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে মাঠে আছেন, গণসংযোগ করছেন। অ্যাডভোকেট তারেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগসাজশ করে তানোর ও গোদাগড়ী বিএনপির রাজনীতিতে সহিসংতা চালিয়ে বিবেধ তৈরি করে দলের লোকজনের ভিতরে ও বিরোধ সৃষ্টি করে চলেছেন। এজন্য তাকে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা প্রয়োজন বলে জানান নেতাকর্মীরা। এব্যাপারে মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিনের মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। ই/তা
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে