খুলনায় ট্রিপল মার্ডারের ক্লু উদঘাটন : মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেফতার ৩

এফএনএস (এম এ আজিম; খুলনা) : | প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৭ পিএম
খুলনায় ট্রিপল মার্ডারের ক্লু উদঘাটন : মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেফতার ৩

খুলনায় চাঞ্চল্যকর শিশু ফাতিহা (৭) ও মুস্তাকিম (৮) এবং নানী মহিতুন্নেছা (৫৩) হত্যা মামলার ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। এক লাখ টাকার বিনিময়ে এই ট্রিপল হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। নিহত ফাতিহা ও মুস্তাকিমের বাবা শেফার আহমেদের আপন মামাতো ভাই ফ্রান্স প্রবাসী মোঃ শামীম শেখ ওরফে শেখ শামীম আহম্মেদসহ ৭ জন হত্যা মিশনে অংশগ্রহণ করেন। জমাজমি নিয়ে বিরোধের কারণেই ট্রিপল হত্যা সংগঠিত হয়। হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মোঃ শামীম শেখ ওরফে শেখ শামীম আহম্মেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।  

শনিবার দুপুরে খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্যদেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মোঃ সালেহ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রূপসা আইচগাতী ইউনিয়ন ভবাণীপুর গ্রামে ১ একর ৬৯ শতক পৈত্রিক জমি নিয়ে শেফার আহমেদের সাথে তারই মামাতো ভাই শামীমের বিরোধ ছিল। আদালতে মামলাও চলছে। ২০০৩ সালে শামীম একটি অস্ত্র মামলার আসামী ছিলেন। এরপর তিনি ফ্রান্সে চলে যান। ২০১৭ সালে ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ৭-৮ মাস আগে জামিনে মুক্তি পান। জেলখানায় বসেই শামীম তার ফুফাতো ভাই শেফারের পরিবারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। 

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, অস্ত্র মামলায় জেলে থাকাকালে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে শামীমের। জেলখানা থেকে বের হয়ে তিনি জেলখানায় পরিচিত সন্ত্রাসীদের ১ লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে পতিপক্ষ সেফার আহম্মেদের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করেন। গত ১৬ নভেম্বর দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে শামীমের নেতৃত্বে ৭ জন লবণচরা এলাকার দরবেশ মোল্লা গলির শেফার আহমেদের বাড়ীতে প্রবেশ করে। প্রথমে দেওয়াল টপকে একজন ভেতরে প্রবেশ করে প্রধান গেটের পকেট গেটটি খুলে দেয়। এরপর তারা একে একে তিনজনকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করে মুরগীর খামারের কক্ষে রেখে দেয়। এরপর তারা শেফার আহমেদ ও তার স্ত্রী রুবি আক্তারকে হত্যা করার জন্য ওই বাড়ীতেই অবস্থান করে। কিন্তু সেটি সফল করতে না পেরে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। 

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মোঃ সালেহ আরো বলেন, হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী শামীম আহম্মেদ ঘটনার দিন থেকে পলাতক ছিল। সে কৌশলে ফ্রান্সে পালিয়ে যাচ্ছিল। গত ২৭ নভেম্বর রাত তিনটায় ঢাকার বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া এ মামলায় আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, লবণচরা থানার মোল্লাপাড়া এলাকার মোঃ আজহারুল ইসলাম আরজুর ছেলে তরিকুল ইসলাম তারেক (২৬)। তার বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা রয়েছে। এছাড়া এ ট্রিপল হত্যা মামলায় একই থানার জিন্নাহপাড়া এলাকার মোঃ বাবুল হাওলাদারের ছেলে তাফসির হাওলাদারকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুরি ও ছিনতাইয়ের দুটি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে শামীম আহমেদ শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে শামীম বলেছে যে হত্যা মিশন সফল হওয়ার পর সে ভাড়াটে খুনীদের এক লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর ওই বাড়ি থেকে লুট হওয়া জমির দলিলপত্র ও স্বর্ণালংকার এখনও উদ্ধার হয়নি। তিনি বলেন, এ মামলার সকল আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রেস ব্রিফিংএ নিহত ফাতিহা  ও মুস্তাকিমের বাবা শেফার আহমেদ এবং মা রুবি আক্তার উপস্থিত ছিলেন। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে