গোলাম পরওয়ার

কিছু ব্যক্তির কুপরামর্শে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
কিছু ব্যক্তির কুপরামর্শে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেছেন, সরকারের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির কুপরামর্শে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এই অভিযোগ তোলেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সব বিভাগীয় শহরে পর্যায়ক্রমে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে; তার প্রথমটি ছিল রাজশাহীতে। সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সরকার নির্বাচনের যে ডেটলাইন ঘোষণা করেছে, তা আমরা মেনে নিয়েছি। নির্বাচনে যেতে আমরা প্রস্তুত; কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না, সে প্রশ্ন এখন জাতির সামনে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু ব্যক্তির কু-পরামর্শে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যানকে একাধিকবার জানিয়েছি—একই দিনে এ দুটি ভোট হলে কী ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। তারপরও আমাদের দাবি মানা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারকে সংকটে ফেলতে চাই না। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই কথা বলে যাচ্ছি। এখনো সময় আছে—জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের তারিখ পরিবর্তন করুন। জনগণের ম্যান্ডেটকে নষ্ট করার কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। জুলাই সনদের আলোকে আগে গণভোট, পরে পার্লামেন্ট গঠিত হবে। এই ক্রমে কোনো পরিবর্তন জনগণ মেনে নেবে না।’ বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি অভিযোগ করেন, ‘একটি দল শুরু থেকেই সংস্কারের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে আসছে। এখন জনতার চাপের মুখে তারা নিরুপায় হলেও এখনও ষড়যন্ত্র করছে—কীভাবে ভোট পেছানো যায়, কীভাবে একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন করা যায় এবং কীভাবে সংস্কারের ধারাবাহিকতাকে নষ্ট করা যায়।’ নির্বাচনি পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। একটি দলের গোপন তৎপরতায় ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি—যাদের-তাদের ইচ্ছেমতো বদলি করা হচ্ছে। প্রশাসনকে প্রভাবিত করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনি ক্যাম্প ও মিটিংয়ে হামলা হচ্ছে। প্রশাসন যদি এখনই এসব বন্ধ করতে না পারে, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘৫৪ বছরে আমরা তিনটি দলকে ক্ষমতায় দেখেছি—এদের প্রত্যেকের শাসনকালেই বাংলাদেশ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তারা সন্ত্রাস করেছে, লুটপাট করেছে, ভিন্নমত দমন করেছে। ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের কারাগারে, রিমান্ডে, ক্রসফায়ারে কিংবা ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে হত্যা করেছে। ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংস করেছে। আগামী বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিকে লালকার্ড দেখানোর বাংলাদেশ।’ জোট সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমাদের আটদলীয় জোট আরও বড় হচ্ছে। বেশ কিছু রাজনৈতিক দল জোটে যুক্ত হতে আবেদন করেছে। খুব শিগগিরই এই জোটের পরিধি বাড়বে।’ সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে