বাংলাদেশ জ্বালানি তেলের জন্য বিপুলভাবে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান রাখা শিল্প, কৃষি, সেবাসহ পরিবহন খাত সম্পূূর্ণরূপে বিদেশ থেকে আমদানি করা এ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় জ্বালানি সরবরাহ যদি কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয় কিংবা জ্বালানি তেলের বাজার যদি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে তাহলে এর প্রভাব দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর পড়বে। এটাই স্বাভাবিক। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত না হলে শিল্প উৎপাদন, কৃষি, পরিবহণ এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি, বিশেষ করে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে। বর্তমানে আমাদের গ্যাস চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরশীল, অথচ দেশে এলএনজি সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। মহেশখালীতে দুটি এলএনজি টার্মিনাল থাকলেও সেখানে দীর্ঘমেয়াদি মজুদের সুবিধা নেই। ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়া মাত্রই দেশের শিল্প-কারখানা, বিশেষ করে পোশাক খাত চরম বিপদের মুখে পড়ে। এ রকম অনিশ্চয়তা যেমন বিদ্যমান শিল্পের জন্য হুমকি, তেমনি শিল্পে নতুন বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে। কারণ জ্বালানি নিরাপত্তা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে আস্থা পান না। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যমান প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজির পাশাপাশি আমাদের বিকল্প জ্বালানির উৎস, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা জানি, সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত হুমকি মোকাবেলায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। তাই আমাদেরও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানা সংকটের মুখে স্থিতিশীল রাখতে জ্বালানির পর্যাপ্ত মজুদ এবং সরবরাহ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তাই, জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সাহায্য করে। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সরকার একদিকে যেমন জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি মজবুত ও টেকসই ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়। এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক বিষয় নয়, বরং জাতীয় স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।