আমতলী-তালতলী উপজেলা মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ ম্যানেজ করে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় পায়রা নদীতে অবৈধ জাল দিয়ে অবাধে জাটকা ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। অভিযোগ রয়েছে, মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ীরা তাদের দাদন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী সোনাকাটা ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবর ফরাজীসহ স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীরা তিন দপ্তরকে ম্যানেজ করেই জেলেদের দিয়ে জাটকা ইলিশ শিকার করাচ্ছেন। জাটকা ইলিশ শিকার করলেও তিন দপ্তর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা গেছে, গত পয়লা নভেম্বর থেকে সাগর ও নদীতে জাটকা ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিপণন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীরা মৎস্য বিভাগ, কোষ্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ ম্যানেজ করে জেলেদের দিয়ে অবাধে জাটকা ইলিশ শিকার করাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিন দপ্তরকে ম্যানেজ করায় তারা জাটকা ইলিশ শিকারে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরও অভিযোগ রয়েছে, দায়সারা অভিযান পরিচালনা করলেও তারা আগেই দাদন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জেলেদের কাছে অভিযানের খবর পৌছে দিচ্ছেন। এতে জেলেদের আটকানো কঠিন হচ্ছে।
আমতলী-তালতলী উপজেলায় ১৩ হাজার ৬৯৯ জন জেলে রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূল তালতলী ও আমতলী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৮ হাজার জেলে ইলিশ শিকার করছেন। ওই জেলেরা অবৈধভাবে ২.৬ ইঞ্চি (৬.৫ সেমি) ফাঁসের জাল দিয়ে ইলিশ শিকার করছেন। দাদন ব্যবসায়ীদের প্রভাবে জেলেরা সাগরে নির্ভয়ে অবৈধ ফাঁসের জাল দিয়ে ইলিশ শিকার করছেন। মাঝে মধ্যে ফকিরহাট কোস্টগার্ড, নিন্দ্রা নৌ পুলিশ ও উপজেলা মৎস্য অফিস নামমাত্র দু-একটি অভিযান পরিচালনা করলেও সাগর ও নদীতে জেলেদের খুঁজে পায় না তারা। এগুলো তাদের লোক দেখানো অভিযান বলে জানান স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফকিরহাট বাজারের বিএফডিসি ঘাট, আমতলী ও তালতলীর বিভিন্ন আড়ৎ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ টন জাটকা ইলিশ ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, তালতলীর ফকিরহাট, আশারচর, নিশানবাড়িয়া, নিন্দ্রা সকিনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেদের শিকার করা জাটকা ইলিশ আড়ৎদার (দাদন) ব্যবসায়ী পরিবহন করছেন।
স্থানীয় ছত্তার ফকির ও ইলিয়াস বলেন, দাদন ব্যবসায়ীরা জাটকা ইলিশ শিকারে জেলেদের বাধ্য করছেন। জেলেরা তাই ইলিশ শিকার করছে।
তালতলী উপজেলার ফকিরহাটের জুয়েল ও শাহীনসহ কয়েকজন জেলে বলেন, দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদন নিয়েছি, তাই তাদের টাকা পরিশোধ করতেই জাটকা ইলিশ শিকার করছি। তারা আরো বলেন, দাদন ব্যবসায়ীরাই প্রশাসনকে ম্যানেজ করছেন।
ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মজিবর ফরাজী বলেন, জেলেরা নিজেরা নিজেরা নিষিদ্ধ জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ মাছ শিকার করছে। এখানে আড়ৎ ব্যবসায়ীদের কোন হাত নেই।
তালতলীর নিদ্রা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাগর ভদ্র টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমরা সাগর সংলগ্ন পায়রা নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু জেলেদের বিরুদ্ধে কতটা ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন প্রশ্নে জবাব দিতে পারেননি তিনি।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন অনুপস্থিত ছিলাম, ফলে সাগর ও নদীতে অভিযান পরিচালনা করতে পারিনি। তাই জেলেরা নদীতে অবৈধ ফাঁসের জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ শিকার করেছে।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার তন্ময় কুমার দাশ বলেন, বরাদ্দ না থাকায় পায়রা নদীতে জাটকা ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান পরিচালনার করতে পারছি না। এই ফাঁকে জেলেরা কিছু জাটকা ইলিশ শিকার করছে। তিনি আরো বলেন, বরাদ্দ পেলেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেবক মন্ডল বলেন, কোন মতেই জাটকা ইলিশ শিকার, পরিবহন ও বিপণন করতে পারবে না। এর সাথে যারা জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।