নতুন জেগে ওঠা বালুচর এখন বাদামের খেত

এফএনএস (মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম সিদ্দিক; চিলমারী, কুড়িগ্রাম) : | প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০১:৫৬ পিএম
নতুন জেগে ওঠা বালুচর এখন বাদামের খেত

বন্যা, নদীভাঙন আর অনিশ্চিত আবহাওয়ার প্রভাবে প্রতিবছরই বদলে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের চিলমারীর চরাঞ্চলের কৃষির ধরণ। ব্রহ্মপুত্র নদের বুক জুড়ে জেগে ওঠা নতুন বালুচরগুলো

এখন বহু মানুষের জীবিকার প্রধান ভিত্তি। এসব চরে ধান-ভুট্টার বদলে বাড়ছে বাদাম চাষ। খরা-সহনশীল, কম রসে জন্মায় এবং তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি হওয়ায় চরবাসীর ভরসা হয় উঠেছে এই ফসল।

চিলমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে চিলমারী,

অষ্টমীর চর ও নয়ারহাট ইউনিয়নের দ্বীপচর এলাকায়।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমিতে ৩০-৩৫ কেজি বীজ লাগে। তিন মাসেই

ফসল ঘরে তোলা যায়। এবার প্রতি বিঘায় ২০-২৫ মণ পর্যন্ত ফলন মিলছে। প্রতিমণ বাদাম

২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যয় পড়ে ২০-২৫ হাজার টাকা, আর

বিক্রি থেকে মিলছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। ফলে ভালোই লাভ থাকছে।

তবে কৃষকেরা বলছেন, আগের মতো ফলন হচ্ছে না। নয়ারহাটের চাষি আকছেদ

প্রামাণিক বলেন, ‘এখন বালুর রস দ্রুত শুকিয়ে যায়। পাতা মরে, বাদাম নষ্ট হয়।’ চাষি

শওকত আলী জানান, ‘চরে অন্য ফসল টেকে না। তাই ২০ বছর ধরে বাদামই করছি।’

কৃষিবিদেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ব্রহ্মপুত্রের পানির স্তর কমে গেছে। ফলে চরের

জমিতে রস ধরে না। অতিরিক্ত সেচ দিতে হচ্ছে, ব্যয় বাড়ছে, উৎপাদন কমছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, ‘সেচ দিলে ফলন বাড়ে। পাশাপাশি

জলবায়ুুসহিষ্ণু জাত বারি চিনাবাদাম-৯, বিনা বাদাম-৬ ও ৮ চরাঞ্চলে ভালো ফল দিচ্ছে।’

নদী ও চরবিষয়ক গবেষক ড. সাদ কাশেম মনে করেন, জলবায়ুর প্রভাব সবচেয়ে আগে পড়ছে

চরাঞ্চলে। বর্ষায় নদীতে বালি জমে, বর্ষা শেষে সেই বালু রস ধরে রাখতে পারে না। ফলে

বাদামের মতো ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

চরবাসী জানে, মাটি আজ আছে, কাল নেই। তবু নতুন বালুচর তাঁদের নতুন আশ্রয়।

আর সেই আশ্রয়ের অন্যতম ভরসা এখন বাদাম চাষ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে