দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া কাজীদের মাধ্যমে নাবালক-বালিকাদের অবৈধভাবে বিয়ে সম্পন্ন করার প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে। এমন ভুয়া কাজীরা কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের ‘রেজিস্টার্ড কাজী’ পরিচয়ে বিয়ে পড়াচ্ছে এবং রেজিস্ট্রি খাতায় নকল এন্ট্রি তৈরি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রানিনগর এলাকা থেকে ছদ্ধনাম: মো:বেলাল হোসেন নওগাঁ জজকোট এলাকায় এসে রেজিস্টার্ড কাজী’ পরিচয়ে বিয়ে পড়াচ্ছে । এদের পরে রেজিস্ট্রি কপি সংগ্রহ করতে গেলে পরিবারগুলো চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।এই ধরনের ভুয়া কাজীরা সাধারণত এদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি, এই ধরনের ভুয়া কাজীরা সাধারণত গ্রাম-অঞ্চল, নওগাঁ জজকোট এলাকায় , বাজার এলাকা বা ভাড়ায় নেওয়া ছোট অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করে। অধিকাংশ সময় বিয়ের সময় তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দেয়, বিয়ের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে নিরুৎসাহিত করে এবং বয়স কম থাকলে বিভিন্ন “ব্যবস্থা”করে বিয়ে সম্পন্ন করার আশ্বাস দেয়। বিয়ের রেজিস্ট্রি বই দেখানোর দাবি করলে অনেক সময় অনুমোদিত নয় এমন নকল রেজিস্টার ব্যবহার করা হয়।
বিয়ের কিছুদিন বা মাস পর রেজিস্ট্রি কপি প্রয়োজন হলে দেখা যায়-
● রেজিস্ট্রি নম্বর অস্তিত্ব নেই
● খাতায় কাজীর সীল নকল
● বই সরকারি অফিসে সংরক্ষিত নয়
● রেজিস্ট্রি “অকার্যকর”বা সম্পূর্ণ ভুয়া
ফলে পরিবারগুলো আইনি জটিলতায় পড়ছে। নাবালক বয়স গোপন করে বিয়ে পড়ানোর কারণে ভবিষ্যতে বিবাহ বাতিল, সামাজিক সমস্যা, এমনকি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখিও হতে হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাবালিকা বা নাবালক ছেলে-মেয়েদের বিয়ে পড়ানো বাংলাদেশে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। শিশুবিয়ে নিরোধ আইন অনুযায়ী এতে জড়িত কাজী, মধ্যস্থতাকারী, এমনকি অভিভাবকও আইনি শাস্তির আওতায় পড়তে পারেন। ভুয়া কাজীরা এই দুর্বল জায়গাগুলোকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করছে, যা ভবিষ্যতে সমাজে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, ভুয়া কাজীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে নাগরিকদের সতর্কতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে রেজিস্ট্রি করানোর আগে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে-
✔ কাজীর লাইসেন্স সত্যিকারের সরকারি অনুমোদিত কিনা
✔ কাজী অফিস স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় তালিকাভুক্ত কিনা
✔ রেজিস্ট্রি বই সরকারি স্টাইলে তৈরি কিনা
✔ বয়স প্রমাণপত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন) সঠিকভাবে যাচাই করা হয়েছে কিনা
এছাড়াও, সন্দেহজনক কোনো খরচ, তাড়াহুড়ো করে বিয়ে পড়ানোর চেষ্টা বা রেজিস্ট্রি কপি দিতে অনীহা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ভুয়া কাজী ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা জরুরি। কেউ প্রতারণার শিকার হলে তা নিকটস্থ থানা, রেজিস্ট্রি অফিস বা স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে পারে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
নাবালক-বালিকা বিয়ের ভয়াবহতা ও ভুয়া কাজীদের প্রতারণা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রচারণা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন শিশু ও নারী অধিকার সংগঠনগুলো।