প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে এডহক কমিটির আহবায়কের অভিযোগ

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:০৬ পিএম
প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে এডহক কমিটির আহবায়কের অভিযোগ

দাখিল মাদ্রাসার প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত তিনটি ক্লাশ বন্ধ রেখে প্রাইভেট নূরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত, বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত, নিকট আত্মীয়কে পুনরায় সভাপতি বানানোর অপচেষ্টা, সরকারি বই বিক্রয়সহ বিস্তার অভিযোগ এনে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সুপারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মিয়ারচর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ওই মাদ্রাসার এডহক কমিটির আহবায়ক (সভাপতি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন-মাদ্রাসার বর্তমান সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতির একক ক্ষমতা বলে আট লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকরি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সাবেক সভাপতি ও সুপার মিলে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসায় একজন নাইটগার্ড নিয়োগ করেছেন। এছাড়াও চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি আদায়, মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফি, সার্টিফিকেট প্রদান, দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ অর্থ আদায়, সরকারি বই বিক্রয় এবং অন্যান্য ফি আদায়ের কোন প্রমানপত্র বা রশিদ ছাড়া আদায় করে ইচ্ছেমতো খরচ করে বাকি অর্থ সুপার ও সভাপতি আত্মসাত করেন।

মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আরও অভিযোগ করেন-দাখিল মাদ্রাসার প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত ক্লাশ বন্ধ রেখে মাদ্রাসার সামনে ব্যক্তিগত নূরানী মাদ্রাসা খুলে মাদ্রাসার শিক্ষক দিয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ওই ব্যক্তিগত নূরানী মাদ্রাসায় বেতন নিয়ে পড়ানো হয়। নূরানী মাদ্রাসা থেকে যে আয় হয় তা থেকে সুপার নিয়মিত ভাগ নিচ্ছেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন-দাখিল মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর নিয়ম থাকলেও তিনি (সুপার) সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় ওই তিন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের নূরানী মাদ্রাসায় পাঠিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী শুন্য রাখেন। অভিযোগে আরও জানা গেছে, এবতেদায়ীর ওই তিন ক্লাসে ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত প্রাপ্ত পাঠ্য বইগুলো কি করা হয়েছে তা জানতে চাইলে সুপার কোন জবাব দিতে পারেননি।

এছাড়াও একজন সহকারী শিক্ষিকার প্রায় দুইবছর প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই শিক্ষিকা কিছুদিন ছুটি দেখিয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলেও সুপার কৌশলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ঠিক করে রাখেন। জাহাঙ্গীর হোসেন তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন-সুপার যোগদানের পর থেকে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত টিউশন ফি বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ সুপার নিজে একাই ভোগ করে আসছেন।

লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল জলিল বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে নূরানী মাদ্রাসাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্যসব অভিযোগের তদন্ত চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

উল্লেখিত সকল অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে মিয়ারচর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন-প্রতিষ্ঠানের আগামীর ম্যানেজিং কমিটি গঠণ নিয়ে স্থানীয় দুইপক্ষের দ্বন্ধের বলি হচ্ছি আমি। কোন অভিযোগের সত্যতা নেই। যার সঠিক তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন-আমি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে সাবেক সুপার ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা নূরানী মাদ্রাসাটি চালু করেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে নূরানী মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে