দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় থাবা লবণাক্ত জলের অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ। এই মারাত্মক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মানুষের বসতি ও কৃষিজমি রক্ষার জন্য খুলনার কয়রায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর), সকাল ১০ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপটির সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তরুণ কুমার রায়। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন অগ্রগতির মোঃ আব্দুস সালাম, জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন হাজারো মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় প্রায় ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলা ভয়াবহভাবে লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এতে ফসল উৎপাদন কমছে, সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে এবং হাজার হাজার মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন।উপস্থিত বক্তারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে তুলে ধরে বলেন, "লবণাক্ততা শুধু একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য চরম হুমকি। এই সংলাপে আমরা চাইব, কেবল আলোচনা নয়, মাঠ পর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এমন একটি সমন্বিত কৌশল তৈরি হোক, যা নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে।"নীতি সংলাপের মূল লক্ষ্য ও উদ্যোগ এই ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে, অগ্রগতি সংস্থা এসআরএলআইএন-এর উদ্যোগে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা নেটজ বাংলাদেশ ও বিএমজেড -এর সহযোগিতায় এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি সংলাপের আয়োজন করা হয়। এর মূল লক্ষ্যগুলো হলো: দুর্বল গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন: লবণাক্ততার কারণে জীবন ও জীবিকা হারানো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের, অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানো। নীতি-নির্ধারকদের যুক্ত করা: নীতিনির্ধারক, বিজ্ঞানী, উন্নয়নকর্মী এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতিনিধিদের এক মঞ্চে এনে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের রূপরেখা তৈরি করা। টেকসই প্রযুক্তি: বাঁধ নির্মাণ, লবণসহিষ্ণু ফসলের জাত ও বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মতো প্রমাণিত ও টেকসই প্রযুক্তিগুলো জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। নাগরিক সমাজের ভূমিকা: জলবায়ু পরিবর্তনে কার্যকর সাড়া দিতে এবং স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবনী সমাধানগুলিকে মূলধারায় আনতে নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলির ভূমিকাকে শক্তিশালী করা। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইসতিয়াক আহমেদ ভেটেরিনারি সার্জন ডা.শুভ বিশ্বাস
উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এইচএম শাহাবুদ্দিন আহমেদ, কয়রা সদর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান,সিএনআরএস মুস্তাক মাহমুদ,অগ্ৰতির প্রজেক্ট ম্যানেজার রিয়াজ আহমেদ, ইউপি সদস্য আবু হাসান,কারিতাসের মোঃ মিজানুর রহমান" সাংবাদিক এস এম এ রউফ, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ কামাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী প্রমুখ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ইউনিয়নের অগ্ৰগতির উপকারভোগী নারী সদস্যরা। উপস্থিত বক্তা ও প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে আশা করা যায়, কয়রার এই নীতি সংলাপ উপকূলীয় ১৮ জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষের জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে জাতীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পথ নির্দেশ করবে।