১৫ বছর ধরে অচল দক্ষিনের একমাত্র ভূকম্পন যন্ত্র

এফএনএস (কাজল বরণ দাস; পটুয়াখালী) :
| আপডেট: ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম | প্রকাশ: ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:১৫ পিএম
১৫ বছর ধরে অচল দক্ষিনের একমাত্র ভূকম্পন যন্ত্র

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুিক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়কারী যন্ত্রটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অচল রয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা তাৎক্ষনিক জানতে পারছেনা দক্ষিনের কোটি মানুষ। আর সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ভুকম্পনের মাত্রা না জানা এবং গবেষনা শিক্ষা জ্ঞান লব্ধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন শিক্ষার্থীরা। 

পবিপ্রবি সূত্রে জানাগেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তির আওতায় দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং  দুটি জেলা শহরে  স্থায়ীভাবে এই সিসমোগ্রাফি যন্ত্র স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের  অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখ্তার।

২০১০ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ যন্ত্রটি স্থাপিত হওয়ার পর মাত্র দুটি ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছিলো। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে যন্ত্রটিতে কারিগরি সমস্যা দেখা দিলে বিকল্প পদ্ধতিতে একাডেমিক ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারের সঙ্গে ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ সংযোগসহ ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি চালু করা হয়। এরপর  চালুর এক বছর না যেতেই আবারও নষ্ট হয়ে যায় ভুমিকম্পন যন্ত্রটি।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি এক যুগ ধরে অচল থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ।

পবিপ্রবি'র পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল, তানিয়া, সুলতানা সুমী, মার্জিয়া জানিয়েছেন, ভুকম্পন যন্ত্রটি সচল না থাকায় শুধু ম্যানুয়াল এবং আইটি ছাড়া ভিজ্যুয়াললি গবেষনা এবং বাস্তব সম্মত শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। 

এছাড়াও যন্ত্রটি সচল না থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ভূমিকম্পের আগাম বার্তার আওতায় আসতে পারছেন না। 

পবিপ্রবি’র ভুকম্পন বিশেষজ্ঞ এবং ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স এবং  ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রমন কুমার বিশ্বাস বলেন, ভূ-কম্পনের ফলে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে। চারটি ওয়েভ একসঙ্গে বের হলেও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ পাওয়ার এর কারনে এক-দুই মিনিট আগে এই সতর্কবার্তা পাওয়া সম্ভব হয়। যদি ২৪ ঘণ্টা এ যন্ত্র মনিটর করা হয় তাহলে জনগণকে ভূমিকম্প সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি জানমালের ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব। এছাড়া এই যন্ত্রের অংশ বিশেষ (প্লেট) মাটির নিচে থাকে। এই প্লেটের সাহায্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ ভূমির অবস্থান উপরে উঠছে, নাকি নিচে নামছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

পবিপ্রবি ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ মোঃ শামসুজ্জোহা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ডিপিপিতে ভূমিকম্পের যন্ত্র ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যার ক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৮৬ লক্ষ টাকা।

পবিপ্রবি প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হেমায়েত জাহান বলেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে করা চুক্তিটি আবারো পূর্নবহাল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভুকম্পন যন্ত্রটি আবারো নতুন রুপে স্থাপিত হবে পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে, এ উদ্যোগ ও প্রত্যাশা রয়েছে তাদের।

বিকল ভুমি কম্পন যন্ত্রের স্থানে নতুন যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হলে পূর্নতা পাবে পবিপ্রবির দূর্যোগ অনুষদ। জ্ঞানলব্ধ হবে সাধারন শিক্ষার্থীরা। আর দুর্যোগে দুর্ভোগে ভূকম্প আবহের স্বচ্ছ ধারনা পাবে দক্ষিনের মানুষ, এমনটাই মনে করছেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে