দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে ঘিরে শত শত দুর্ষর্ধ আসামি জেল থেকে পালিয়ে যায়। তার মধ্যে এখনো বিপুলসংখ্যক আসামি অধরাই রয়েছে। ওই সময় দেশের পাঁচটি কারাগার থেকে ২ হাজারেরও বেশি বন্দি পালিয়ে যায়। কিন্তু ১৫ মাসে এখনো অধরাই রয়েছে পালিয়ে যাওয়া ৭০০ বন্দি। তাদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামি, বিডিআর বিদ্রোহ, হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামি এবং বেশ কয়েকজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছে। দেশের বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ব্যস্ততায় জেল পালানো বন্দি গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোর দিতে পারেনি। আর এখন নির্বাচনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছে পুলিশ। কিন্তু জেল পালানো দুর্ধর্ষ বন্দিদের আইনের আওতায় না আনা গেলে নির্বাচনি নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকির আশঙ্কা রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে সারা দেশে পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জেল পলাতক বন্দিদের পাশাপাশি দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কারাগার থেকে অনেক পেশাদার আসামির ঢালাও জামিন হয়। যা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বাড়িয়েছে। ওসব অপরাধীর অনেকেই ইতোমধ্যে রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে চলে গেছে। কিন্তু জননিরাপত্তা নিশ্চিতে জামিনপ্রাপ্তদের জামিন বাতিল করে এবং পলাতকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না গেলে পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে ২৪ জুলাই আন্দোলনে সরকার পতনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে হামলা ও বন্দি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। চরম বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহে ১৬ জন নিহত হন। বন্দি পালানো কারাগারগুলোর মধ্যে নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে সর্বোচ্চ ৮৪৬ জন পালিয়ে যায়। গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যায় ২০২ জন বন্দি। তাদের অধিকাংশই কারাগারে ছিলো জঙ্গিবাদের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায়। কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে ১০৫ জন, শেরপুর জেলা কারাগার থেকে ৫১৮, সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে ৫৯৬ জন পালিয়ে যায়। তার মধ্যে নরসিংদী থেকে পালানোদের মধ্যে ১৬০ জন, সাতক্ষীরা কারাগারের ৪০ জন, কুষ্টিয়ার ১৬ জন, হাই সিকিউরিটি কারাগারের ১৩০ জন ও শেরপুর কারাগারের ৩৫৪ জন বন্দি এখনো অধরা রয়েছে। তাছাড়া এখনো উদ্ধার করা যায়নি ওসব কারাগার থেকে লুট হওয়া ২৭টি অস্ত্র এবং ৭ হাজার ৪০০ রাউন্ড গুলি। উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে চায়নিজ রাইফেল, বিডিএইড এবং শটগান।
এদিকে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও মিডিয়া) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেল পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। কারাগারে সহিংসতা চালানোর সময় অনেক নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়। সেজন্য পলাতক বন্দিদের অনেকের তথ্য নেই। যদিও থানা ও আদালতে থাকা তথ্যেও অনেকে শনাক্ত হচ্ছে। যখন কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে- তাকে আগের মামলার সঙ্গে পালানোর মামলার আসামি হিসেবেই গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে ঢুকানো হচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন জানান, সারা দেশে জেল পলাতক বন্দিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। নির্বাচনি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।