বগুড়ার শেরপুরে জোড়গাছা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চুড়ান্ত নিয়োগ পাওয়ার একবছর পর নিয়োগকৃত পদের অনুকুলে শিক্ষা সনদ অর্জন করেন মো. মশিউর রহমান। এমপিওভূক্তির দুই যুগ পর বেরিয়ে এসেছে ওই শিক্ষকের গোপন রহস্য। সহকারি শিক্ষক পদের অনুকূলে স্নাতক পাশের আবশ্যকতা থাকলেও নিয়োগ প্রাপ্তির পরের বছর ডিগ্রী পাশের সনদ পায় ওই শিক্ষক। এদিকে নিয়োগের প্রায় ৩ দশক পর গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ায় চাকুরী বাচাতে স্থানীয় ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি’র নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে ওই শিক্ষক। এদিকে ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের শেষের দিকে উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘‘ সহকারি শিক্ষক’ পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা নুন্যতম স্নাতক পাশ আবশ্যাকতা রেখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তৎকালীন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একই সালের ১২ ডিসেম্বরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের স্বরো গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মো. মশিউর রহমান তারা সংশ্লিষ্ট পদের অনুকুলে কাগজপত্র সাপেক্ষে আবেদন করে ম্যানেজিং কমিটির বরাবরে। এর প্রেক্ষিতে সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মারফৎ তৎকালীন জোড়গাছা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘‘সহকারি শিক্ষক’ পদে মশিউর রহমান ১৯৯৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর চুড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। নিয়োগপত্রে বে-সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক/কর্মচারীদের বেতন স্কেল অনুসারে বিধি মোতাবেক প্রদত্ত ৩০% মুল বেতনে নির্ধারিত ৫১৭.৫০ টাকা ধার্য করা হয়। সে মোতাবেক ওই বিদ্যালয়ে স্ব-পদে ২৭ ডিসেম্বর যোগদান করেন মশিউর রহমান। এ সময় বিদ্যালয়ের তৎকালীন সেক্রেটারী (প্রধান শিক্ষক) তাকে যোগদানের অনুমোদন করেন। এদিকে ওই বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে চাকুরী করে আসার এক পর্যায়ে এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় ১৯৯৭ সালে স্বেচ্ছায় স্ব-পদ থেকে পদত্যাগ করে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরীতে চলে যায়। এরপর ২০০০ সালের দিকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক এমপিও ভূক্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে ওই সহকারি শিক্ষক কৌশলে কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই পুনরায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে এসে যোগদান করেন এবং সেই থেকেই অবাধে চলে আসছিল শিক্ষকতা পেশা। নিয়োগকালীন কাগজপত্রে ক্রটি-বিচ্যুতি থাকলেও তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু বিধি বাম চাকুরী জীবনের শেষের দিকে বর্তমানে কাল হয়ে দাড়িয়েছে ‘জৈষ্ঠ্যতার টাইম স্কেল’। সহকারি শিক্ষক মশিউর রহমানের পক্ষে জৈষ্ঠ্যতার টাইম স্কেলের জন্য রাজশাহী শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাচাইপূর্বক সহকারি শিক্ষক মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও শিক্ষক যোগ্যতার সনদ সংক্রান্ত তথ্যে গড়মিল থাকায় ওই স্কেলের উপযুক্ত নয় বলে আবেদনটি খারিজ করে দেয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক। সুত্রমতে ওই সহকারি শিক্ষকের নিয়োগ পত্র অনুযায়ী ২৭/১২/১৯৯৩ সাল উল্লেখ থাকলেও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকের পাশের সনদ ইস্যু হয় ০৭/০২/১৯৯৪ সালে। শিক্ষা বোর্ডের সনদ বিশ্লেষন অনুযায়ী পাশের এক বছর পূর্বেই সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভ হয় কিভাবে! এমনটাই ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষক সমাজ ও সচেতনমহলে। চাকুরী দুই যুগের মাথায় এহেন চাকুরী বিধি লঙ্ঘন হওয়ায় তৎকালীন নিয়োগ কমিটির অদক্ষতা নাকি ওই নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের চতুরতাই দায়ী এমন প্রশ্ন এলাকায় বেশ সোরগোলে পরিণত হয়েছে। তবে ওই শিক্ষক বিগত আওয়ালীগ সরকারের আমলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীদের দাপিয়ে বেড়ালেও এখনও রয়েছে বেশ দাপুটে। তাছাড়া ওই শিক্ষক ভবানীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটির অনুমোদন চিঠি পর্যালোচনায় দেখা যায়। এদিকে চাকুরী বিধি লঙ্ঘনের বিষয় প্রকাশ না করতে এবং তাকে স্ব-পদে বহাল বা চাকুরী যাতে কোন ক্ষতিসাধন না হয় সেজন্য একটি মহল ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কৌশলে চাপ ও উপজেলা পর্যায়ের বেশকিছু বিএনপি’র নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তৎকালীন সময় যারা নিয়োগ দিয়েছেন তারাই ভাল বুঝবেন। আমি কাগজপত্র জমা দিয়েছি সে অনুপাতেই সুরহা হবে। তবে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম জানান, আমি ২০১৪ সালে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি। ওই সহকারী শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত কোন ডকুমেন্ট বা বিষয় আমার অবগত ছিলনা। তবে ওই শিক্ষকের উচ্চতর স্কেলের জন্য গত ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ রাজশাহী শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিডি’র কাছে পাঠানো হলে তার নিয়োগ ও সনদপত্র প্রাপ্তি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেওয়ায় উচ্চতর স্কেল দেয়নি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি ঝামেলা রয়েছে জেনেছি। কিন্তু লিখিত অভিযোগ নেই। তবে নিয়োগের পরে যদি সনদ জমা হয়,তাহলে বিষয়টি অবৈধ বলে প্রতিয়মান হবে। তাছাড়া তদন্ত সাপেক্ষেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশিক খান জানান, বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষককে নিয়োগকালীন সময়ে কি ধরণের প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছিল, রেজুলেশনে কি লেখা রয়েছে সেটি দেখতে হবে। তবে উচ্চতর স্কেলের বিষয়ে যেহেতু সংশ্লিষ্ট ডিডি মহোদয় তার আবেদনটির অসংগতি থাকায় রিফিউজ করে দিয়েছে, সেক্ষেত্রে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।