পেঁয়াজ রোপনের ভরা মৌসুমে সারের কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। ফলে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ। সঠিক সময়ে ক্ষেতে সার প্রয়োগ করতে না পারলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।কৃষকদের অভিযোগ,বিসিআইসি’র সার ডিলার ও কৃষি অফিসের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সারের এ কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। এদিকে ডিএপি সারের তথ্য ও মজুদ নিয়ে সার ডিলার ও কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। কৃষি অফিস বলছে,নভেম্বর মাসের বরাদ্ধকৃত সরকারের ভর্তুকির ১৫’শ ৪২ টন ডিএপি ও ডিসেম্বর মাসে ১৭ শ১৯ টন ডিএপি সার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে ডিলাররা বলছেন,ডিএপি সার নেই,গত ৬ মাস ধরে সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিপুল পরিমাণ এইসব সার কোথায় যাচ্ছে ।কৃষকদের অভিযোগ বিসিআইসি’র ডিলাররা তাদের পছন্দ আর তদবিরে কৃষকদের সার দিচ্ছে। ফলে প্রান্তিক চাষীরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে সার পাচ্ছেন না। এদিকে ইউনিয়নে/ওয়ার্ডে সাব ডিলারদের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দের সার তাদের দিচ্ছে না ডিলাররা। ফলে সংকট আরো বেড়েছে,প্রান্তিক চাষীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে।কৃষি অফিস জানায়,শৈলকুপা উপজেলায় গত মৌসুমে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয় এবার প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ও সম্ভাবনা রয়েছে ।সাব-ডিলার জাফর হোসেন বলেন,তারা সারের জন্য ডিলারদের কাছে ধর্ণা দিয়েও সার পাচ্ছেন না,ফলে কৃষকের ভোগান্তি বাড়ছে। এদিকে সাব-ডিলারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ কৃষকদের। সাব-ডিলাররা তাদের সার বিভিন্ন এলাকায় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে গোপনে বিক্রি করে দিচ্ছে,ফলে এক হাজার ৫০ টাকা বস্তার ডিএপি কৃষকদের কিনতে হচ্ছে ২ হাজার টাকার বেশি দামে।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে,এখন এই অঞ্চলের কৃষকেরা মাঠের পর মাঠজুড়ে পেঁয়াজ রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ চাষীরা সার পাচ্ছে না,বিশেষ করে ডিএপি সার এখন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। এক বস্তা সারের জন্য চাষীদের হাহাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মনোহরপুর ইউনিয়নের কৃষকরা বলছেন,তারা চাহিদা অনুযায়ী ডিএপি সার পাচ্ছে না। এভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকেরা তাদের পেঁয়াজ ক্ষেতে সার দিতে পারেননি এখনো।মনোহরপুর গ্রামের কৃষক সিজার মিয়া,আনোয়ার হোসেন,মনোয়ার হোসেন,শহিদুল মিয়া,হুমায়ুন মিয়া, চুকা হোসেন,রপু মিয়া,রহিদুল মিয়া,রিতন জোয়াদ্দার,রিপন হোসেন,আকবর মিয়া,জাফর হোসেন সহ এক গ্রামেরই অর্ধশত কৃষক এখনো তাদের পেঁয়াজের ক্ষেতে জমি তৈরী ও বপনের জন্য কোন সার পাননি ।
ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের নতুনভুক্ত মালিথিয়া গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন জানান,তার ৭০শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করছেন কিন্তু এখনো প্রয়োজনীয় ডিএপি সার দিতে পারেননি।আবাইপুর ইউনিয়নের হাটফাজিলপুর গ্রামের কৃষক আরিফ জানান, ডিলারদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের স্যার পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন হাটবাজারে ও গ্রামগঞ্জের গ্রামগঞ্জের খুচরো সার বিক্রিতাদের কাছে বেশি দামে সার কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। তবে সময়মতো জমিতে সার দিতে না পারলে পেঁয়াজ চাষে ক্ষতি হয়ে যাবে।
তবে কৃষি অফিসের তথ্য ও বক্তব্যের সাথে একমত নয় সার-ডিলাররা। বিসিআইসি ডিলাররা বলছেন, গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে শৈলকুপায় ডিএপি সারের সংকট রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নেই ডিএপি সহ অন্যান্য সারের। বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি ও হাকিমপুর ইউনিয়নের সার ডিলার নোমান মোল্লার দাবি,চাহিদা অনুযায়ী ডিলাররা সার পাননি,ফলে এমন সংকট দেখা দিয়েছে।
মনোহরপুর ইউনিয়নের সার ডিলার গোলাম নবী জানান,তার কাছে ৫ টনের মতো ডিএপি সার মজুদ আছে,যা বিতরণ চলছে। তিনি বলেন,সরকারি হিসাবে পেঁয়াজ লাগানোর সময় কৃষকেরা বিঘা প্রতি ২০/২৫ কেজি ডিএপি পাবে কিন্তু বস্তা বস্তা ডিএপি দাবি করে কৃষকেরা। এতে করে সংকট বেড়েছে। এদিকে সার ডিলার ও মজুদ কারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে কিছু স্যার উদ্ধার করে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। সার ডিলারদের কাছে কৃষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলছেন,তারা প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করছেন অসাধু সার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। তিনি বলছেন,খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বেশী সার বরাদ্ধ রয়েছে শৈলকুপায়। কোনো ডিলার বা সাব-ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা দ্রুত জানানোর অনুরোধ জানান তিনি। ইতোমধ্যে শৈলকুপা ডিলার সমিতির সভাপতিকে কৃষি অফিস থেকে শোকজ করা হয়েছে।