লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) এক জনসভায় অংশ নিতে যাওয়ার পথে নেতাকর্মীদের ওপর একাধিক স্থানে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১৬টি বাস ও মাইক্রোবাস।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার রামদয়াল বাজার, আজাদনগর ও রামগতি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ একজন আব্দুল মান্নানকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে আছেন চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন জেএসডি ছাত্রলীগ নেতা মো. ফয়সাল, ইবনে হাছান মোহন, চররমিজ ইউনিয়নের হাসানসহ অন্তত ১৫ জন। ঘটনার পর থেকেই উপজেলায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, লক্ষ্ণীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের জেএসডি প্রার্থীকে কেন্দ্র করে আলেকজান্ডার সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভার আয়োজন করা হয়। এই জনসভায় অংশ নিতে যাওয়ার সময় পথে পথে নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্ণীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে বিএনপি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তানিয়া ফেরদৌসী (তানিয়া রব) প্রধান অতিথির বক্তব্যে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব অভিযোগ করেন।
জেএসডি'র রামগতি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বাবলু বলেন, বিএনপি'র মনোনয়নপ্রত্যাশী এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজানের অনুসারীরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। এতে প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। ভাংচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি।
এদিকে একই দিন (সোমবার) রাত সাড়ে ১০ উপজেলা বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে তানিয়া রবের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জেএসডির নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করে দলটির ৩ টি অফিস ভাংচুর,খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজানের ছবি, পোস্টার, ব্যানার ভাংচুর এবং দলটির ২২ জন নেতাকে পিটিয়ে আহত করেছে।
জেএসডির একটি জনসভায় বিশেষ অতিথি করা হয় রামগতি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহলকে। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আপত্তির কারণে বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করে চিঠিও দেয় উপজেলা বিএনপি। এতে স্থানীয় প্রশাসন আ. লীগ নেতা সোহেলকে জেএসডির জনসভায় উপস্থিত থাকতে বারণ করা হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে জেএসডির জনসভায় সোহেল নিজে উপস্থিত না থাকলেও রামগতির বয়ারচর ও চরগজারিয়া থেকে কয়েকশ জলদস্যু এনে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর তান্ডব চালিয়ে নিজের ক্ষমতার জানান দেয়।
আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফ্যাসিস্টের এই দোসরকে গ্রেফতার করতে প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছি। এই ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজ উদ্দিন, রামগতি পৌরসভা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মর্তুজা আল আমিন, বিএনপি নেতা দিদার হোসেন খন্দকার, চরআলগী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তানভীর আহমদ জুয়েল, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শিবলী নোমান, সদস্য সচিব শাহ মোহাম্মদ শিব্বির, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইরাজ মাহমুদ বাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ খান প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়। তবে গুলির কোন ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
উল্লেখ্য, জোটের হয়ে লক্ষ্ণীপুর-৪ (কমলনগর-রামগতি) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে চাচ্ছেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব। একই আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হতে চান বিএনপি নেতা আশরাফ উদ্দিন নিজাম। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এ আসনে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এ নিয়ে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে।