ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া আজকেই সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। সূত্রগুলো বলছে, এ দুজন গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছেন।
এ দিন বিকেল তিনটায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন আসিফ মাহমুদ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তবে আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বলছেন, সংবাদ সম্মেলনেই পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে।
মঙ্গলবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টাদের নিয়মিত বৈঠকে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের প্রসঙ্গ ওঠে। দায়িত্বশীল সরকারি সূত্র জানায়, আলোচনার পরই সরকার নিশ্চিত হয় যে দুই ছাত্র প্রতিনিধি বুধবারই পদত্যাগ করছেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই মনে করছেন, তফসিল ঘোষণার পর তাদের দায়িত্বে থাকা উচিত হবে না। তাই তারা নির্বাচন করুন বা না করুন, সরে দাঁড়ানোই তাদের জন্য উপযুক্ত পথ।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তারা তখন আরও সময় চান। মাহফুজ আলম সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত দায়িত্বে থাকতে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি সে ক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন করবেন না, সেটিও জানিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে গত মাসের মাঝামাঝি আবারও তাদের সরে দাঁড়ানোর জন্য তাগাদা আসে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। আসিফ মাহমুদ গত ৯ নভেম্বর ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদন করে ধানমন্ডিতে ভোটার হন। পরে ঢাকার ১০ নম্বর আসন, অর্থাৎ ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ এলাকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে বা স্বতন্ত্র হিসেবেও তিনি মাঠে নামতে পারেন কিনা, সেটি এখনো অনিশ্চিত।
অন্যদিকে মাহফুজ আলমকে লক্ষ্মীপুর ১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তবে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর এই আসনে তাকেই দলটির মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা আসে। ফলে ওই আসন থেকে মাহফুজের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায়।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পান। নাহিদ ইসলাম পরে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম। আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেও পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পান। যদিও দুজনের কারও এনসিপিতে আনুষ্ঠানিক পদ নেই, তবু তাদের প্রভাব রয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর জোট গঠনের প্রচেষ্টাও জোরদার হয়েছে। রোববার এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ে নতুন জোট ঘোষণার পর বহু আসনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া চলছে। দুই ছাত্র উপদেষ্টা এনসিপির মনোনয়ন নেন কি না, তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নজর রয়েছে।