বিএনপি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সহ্য করেছে, তবু ভেঙে যায়নি বলে মন্তব্য তারেক রহমানের

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
বিএনপি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সহ্য করেছে, তবু ভেঙে যায়নি বলে মন্তব্য তারেক রহমানের

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ সময় পার হয়ে বাংলাদেশ এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে গুম, মিথ্যা মামলা থেকে হেফাজতে মৃত্যু, প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপির নেতা কর্মীরাই। তবু দলটি ভেঙে যায়নি, বরং সত্য আর ন্যায়বিচারের বিশ্বাসে আরও দৃঢ় হয়েছে।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) মানবাধিকার দিবসে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এই মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি লেখেন, গত ষোলো বছর বাংলাদেশ যেন এক অন্ধকারের নিচে চাপা ছিল। রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে অসংখ্য মানুষ ভয়, নির্যাতন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটিয়েছে। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা আর নিখোঁজের আতঙ্ক ছিল অনেক পরিবারের নিত্যসঙ্গী।

স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, এ বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বইতে হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের সময় সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই। তবে অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না, ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, সাধারণ মানুষ, পথচারী, সবাই তাদের ন্যূনতম মানবাধিকার হারানোর যন্ত্রণা বয়ে বেড়িয়েছে।

তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথাও স্মরণ করেন। ২০১৫ সাল থেকে তার বক্তব্য যেন কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ না হয়, এমন নির্দেশনা ছিল বলেও লেখেন তিনি। সেই চাপিয়ে দেওয়া নীরবতার মধ্যেও গণতন্ত্র আর মৌলিক অধিকারের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তারেক রহমান। তার ভাষায়, সত্যের শক্তি নির্দেশে থেমে থাকে না।

স্ট্যাটাসে তিনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। তারেক রহমান বলেন, মিথ্যা মামলা, কারাবাস বা রাজনৈতিকভাবে তাকে নিঃশেষ করার চেষ্টা দেশের ওপর জারি থাকা কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি এবং বিশ্বাস রেখেছেন যে অধিকার সবার, ভয়ের সংস্কৃতি দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায় না।

তারেক রহমান জানান, তার পরিবারও অন্য অনেক পরিবারের মতোই ছিল লক্ষ্যবস্তু। মা নিজের ছেলেকে জেলে নেওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করেছেন, আরেক ছেলেকে হারাতে হয়েছে চিরতরে। তবে তিনি লিখেছেন, কষ্ট মানুষকে সবসময় কঠোর করে তোলে না, কখনো কখনো আরও মহান করে। তার ভাষায়, অন্যায়ের প্রতিকার ঘৃণার পথে নয়, বরং ন্যায়, নৈতিকতা এবং ক্ষমাশীলতার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকের বাংলাদেশে রাজনীতির চেয়েও বড় প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার মানবাধিকার নিশ্চিত থাকবে এবং কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। ভিন্ন মতকে হুমকি হিসেবে নয়, গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে সরে এসেছে এবং সমাধানের পথে বিশ্বাসী। কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে জীবন কাটাতে হবে না, এই প্রতিশ্রুতিই তারা দিচ্ছেন।

মানবাধিকার দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর রুনি সহ অসংখ্য মানুষের নাম স্মরণ করেন। তারেক রহমান বলেন, এসব গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় কেন মানবাধিকার মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত এবং কেন দায়মুক্তির সংস্কৃতি আর কখনো ফিরে আসা উচিত নয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে