ব্যাটারিচালিত রিকশায় নীতিমালা প্রয়োগ প্রয়োজন

এফএনএস | প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম
ব্যাটারিচালিত রিকশায় নীতিমালা প্রয়োগ প্রয়োজন

বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থায় রিকশা একসময়ে শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মাটি ছোঁয়া জনজীবনের সঙ্গে এই তিন চাকার বাহনের বন্ধন ছিল গভীর ও প্রাসঙ্গিক। সহজলভ্যতা, পরিবেশবান্ধবতা এবং কম খরচে চলাচলের সুবিধা- সব মিলিয়ে রিকশা ছিল সাধারণ মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় যখন এই রিকশা রূপ নেয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়, তখন থেকেই শুরু হয় নানাবিধ জটিলতা। এই পরিবর্তনটি একদিকে যেমন মানুষের চলাচলে কিছুটা আরাম এনেছে, অন্যদিকে তেমনি সৃষ্ট করেছে বিপজ্জনক পরিস্থিতি, যা এখন গোটা দেশের সড়ক ব্যবস্থাকে এক গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। অবৈধভাবে উৎপাদন, ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনগত অনিয়ম এবং এর ফলে সৃষ্ট দুর্ঘটনা ও যানজট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। প্রথমদিকে শহরাঞ্চলে সীমিত পরিসরে ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখা গেলেও বর্তমানে এটি ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত। একটি যান যা মূলত গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের জন্য তৈরি, সেটিই আজ মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে- ট্রাক, বাস, অ্যাম্বুলেন্সসহ উচ্চগতিসম্পন্ন যানবাহনের পাশাপাশি। অথচ মহাসড়ক একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির যানবাহনের জন্য নির্ধারিত-যেখানে ধীরগতির, অনিয়ন্ত্রিত ও নিরাপত্তাহীন বাহনের চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাইকোর্ট কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনায় মহাসড়কে এ ধরনের অটোরিকশার চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ কোথাও চোখে পড়ে না। এই বেআইনি ও বেপরোয়া চলাচল প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে তুলছে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি এবং পথচারীদের ভোগান্তি। ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগটি এক বছরেও সমাপ্ত না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ নভেম্বর ঢাকা মহানগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ বা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেন। তার উপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত উক্ত সময়ের মধ্যে ওই রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন। গত বছর ২৭ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক ও উপসচিবকে সদস্য সচিব করে আট সদস্যের কমিটি করা হয়। কিন্তু কমিটি এখন পর্যন্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করতে পারেনি। এখন অবাধে আমদানি, স্থানীয় গ্যারেজে সহজলভ্যতা, সহজে রাস্তায় নামানোর সুযোগ থাকায় স্বল্প পুঁজিতে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ ব্যাটারি রিকশা কিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে নেমে পড়ছেন। এই সংকট নিরসনে শুধু প্রশাসনিক বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাই যথেষ্ট নয়, সাধারণ জনগণকেও তাদের দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে। জনগণের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই অব্যবস্থার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়। অবশ্যই হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও কঠোর নজরদারি অতি জরুরি।