প্রযুক্তি, কল্পনা আর আবেগের মেলবন্ধনে ‘অ্যাভাটার’ সিরিজ যে নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার সেই ধারাবাহিকতায় তৃতীয় ছবি ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ মুক্তির অপেক্ষায়। তবে পর্দার বাইরেও ছবিটি নিয়ে আলোচনা কম নয়। প্রায় সাত বছর ধরে তৈরি হয়েছে এই ছবির সংগীত, আর সেই দীর্ঘ যাত্রার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন সুরকার সাইমন ফ্র্যাংলেন।
এই সাত বছরে ফ্র্যাংলেন লিখেছেন এক হাজার নয়শোর বেশি পৃষ্ঠার অর্কেস্ট্রাল সুর। শুধু তাই নয়, প্যান্ডোরার বাসিন্দাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে তৈরি করেছেন একেবারে নতুন ধরনের বাদ্যযন্ত্র। তাঁর ভাষায়, এই ছবির সংগীত কোনো সাধারণ হলিউড ছবির মতো নয়, বরং এখানে সংগীত নিজেই গল্প বলার বড় অংশ।
ছবির সম্পাদনা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলায় সংগীতের কাজও টেনেছে শেষ পর্যন্ত। ফ্র্যাংলেন জানান, মুক্তির মাত্র পাঁচ দিন আগে শেষ হয়েছে চূড়ান্ত স্কোরের কাজ। পুরো একশ পঁচানব্বই মিনিটের ছবিতেই কোনো না কোনোভাবে সংগীত ব্যবহার করা হয়েছে, যা একটি সাধারণ হলিউড ছবির তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি।
‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’ মুক্তি পেতে চলেছে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর)। এবার গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে গভীর শোক ও মানসিক টানাপোড়েন। জ্যাক সুলি ও নেইতিরি তাদের ছেলের মৃত্যুর শোকে ভেঙে পড়েন, যা তাদের সম্পর্কেও তৈরি করে দূরত্ব। এই মানসিক ভাঙন বোঝাতে সংগীতে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁক, ভাঙন ও নীরবতা ব্যবহার করেছেন ফ্র্যাংলেন। তাঁর মতে, শোকের অনুভূতি প্রকাশে অনেক সময় নীরবতাই সবচেয়ে শক্তিশালী সুর।
অন্যদিকে ছবিতে দেখা যাবে ‘উইন্ড ট্রেডার্স’ নামে এক যাযাবর গোষ্ঠীকে। তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রাণবন্ত ও মজার সুর। গিটার বা ড্রামের মতো পরিচিত বাদ্যযন্ত্রের বদলে প্যান্ডোরার পরিবেশ উপযোগী সম্পূর্ণ নতুন যন্ত্র বানানো হয়েছে। থ্রিডি প্রিন্ট করে তৈরি এসব যন্ত্র সেটে অভিনেতারাই বাস্তবে বাজিয়েছেন।
সাইমন ফ্র্যাংলেনের সংগীতজীবন শুরু হয়েছিল খুব অল্প বয়সে। মাইকেল জ্যাকসন, হুইটনি হিউস্টনের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয় ‘ড্যান্সেস উইথ উলভস’, ‘সেভেন’, ‘টাইটানিক’-এর মতো ছবিতে। টাইটানিকের সময় সংগীতের বাজেট সীমিত থাকলেও, ‘অ্যাভাটার’-এ পেয়েছেন পুরো সৃজনশীল স্বাধীনতা।
পরিচালক জেমস ক্যামেরনের দর্শনেও সেই স্বাধীনতার ছাপ স্পষ্ট। তিনি বিশ্বাস করেন, ভালো কাজের জন্য সময় দরকার। তাই ছবির সংগীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর ভর না করে বাস্তব সঙ্গীতশিল্পীদের দিয়েই সব কাজ করানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে ‘অ্যাভাটার ফোর’ ও ‘অ্যাভাটার ফাইভ’-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সেগুলো বাস্তবায়িত হবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে ‘ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’-এর ব্যবসায়িক সাফল্যের ওপর। ফ্র্যাংলেন বলছেন, দর্শক যদি আবার প্যান্ডোরায় ফিরতে চান, তাহলে তিনি পরের ছবিগুলোর সংগীতেও কাজ করতে প্রস্তুত।