যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ নির্যাতন ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা

এফএনএস (নিজস্ব প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ নির্যাতন ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা

দাবিকৃত তিন লাখ টাকা যৌতুক না পাওয়ায় লক্ষ্ণীপুর সদর উপজেলায় এক গৃহবধূকে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে তার শ্বশুরসহ দুজনের বিরুদ্ধে লক্ষ্ণীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন সচেতন মহল।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, মামলা দায়েরের পরও এখন পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো তারা তাকে ও তার ভাইকে হত্যাসহ মারধরের হুমকি দিয়ে আসছে। এসব অভিযোগ তিনি ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে লক্ষ্ণীপুর শহরের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে নির্যাতনের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি জানান, বিচার চেয়ে লক্ষ্ণীপুরে এলেও বর্তমানে প্রাণভয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে কুমিল্লায় তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, তার স্বামী কর্মসূত্রে দীর্ঘ সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন এবং দুই ননদ বিদেশে অবস্থান করায় তিনি শ্বশুরবাড়িতে প্রায়ই একা থাকতেন। এই সুযোগে শ্বশুর আবু নাছের বারবার তাকে কুপ্রস্তাব দিতেন। শাশুড়ি লক্ষ্ণীপুর সদর হাসপাতালে চাকরি করায় বাড়িতে অনুপস্থিত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠত বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য,শেষবারের ঘটনার সময় আমি সাহস করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করি। পরে বিষয়টি কুমিল্লায় থাকা আমার ভাইকে জানালে ঘটনা প্রকাশ্যে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই—যেন কোনো নারী আর এমন নির্যাতনের শিকার না হয়। আমরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্ণীপুর সদর উপজেলার চন্দখালী এলাকার আবু নাছেরের ছেলের সঙ্গে আড়াই বছর আগে কুমিল্লার এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ের বিয়ে হয়। গৃহবধূর বাবা-মা না থাকায় তিনি ভাইয়ের সংসারে বড় হন এবং সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। বিয়ের পর আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ২০ বছর।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে তার কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। যৌতুক দিতে না পারায় তাকে নিয়মিত মারধর ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, স্বামী কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগ নিয়ে শ্বশুর আবু নাছের একাধিকবার তাকে কুপ্রস্তাব দেন এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। বিষয়টি স্বামী ও শাশুড়িকে জানালেও তারা কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো তাকে দোষারোপ করেন এবং শারীরিক নির্যাতন চালান।

একপর্যায়ে শ্বশুরের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিও প্রমাণ হিসেবে ধারণ করার পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। গত ৪ ডিসেম্বর তিনি শ্বশুর আবু নাছের ও তাদের আত্মীয় বাবুলকে আসামি করে লক্ষ্ণীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

মানবাধিকারকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, “নারী নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করা জরুরি। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হলেও ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া প্রয়োজন, যাতে সমাজে স্পষ্ট বার্তা যায়—নারী নির্যাতনের কোনো ছাড় নেই।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শ্বশুর আবু নাছেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত ০১৭১০৩৮৭০৭৭ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।