মহান বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তরুণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও গণতান্ত্রিক পথচলার ওপর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অপচেষ্টা কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচারিত ১৭ মিনিটের ভাষণে তিনি বলেন, সরকার হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তারা যেখানেই থাকুক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ আবারও একটি বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পথে এগোবার সুযোগ পেয়েছে।
শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই আনন্দের দিনে ব্যথিত হৃদয়ে জানাচ্ছি, এটি শুধু একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়, এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত।” তিনি জানান, সংকটাপন্ন অবস্থায় হাদি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন এবং তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে।
ভাষণে অপপ্রচার ও গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীরা ভয় দেখিয়ে বা রক্ত ঝরিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না।” তিনি সবাইকে সংযমী থাকার এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তির মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।
তরুণদের ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের তরুণদের রক্ষা করুন। তাহলে আমরা সবাই এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষা পাবে।” তার ভাষ্য অনুযায়ী, নির্বাচন সামনে রেখে একটি মহল তরুণদের বাধা হিসেবে দেখছে এবং সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে।
ভাষণের আরেক অংশে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। ড. ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার শুরু থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সহযোগিতা করছে এবং প্রয়োজনে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও বিবেচনায় রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন ও গণভোট বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথরেখা নির্ধারণ করবে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং বলেন, ভোট রক্ষা করা মানেই দেশ রক্ষা করা।
ভাষণের শেষভাগে ড. ইউনূস বলেন, একটি নিরাপদ, সুখী ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের আহ্বান জানান তিনি।