হাইকোর্টের নির্দেশ মতে আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টুনীর নির্মাণ কাজে উপজেলা প্রশাসন বাঁধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরগুনা জেলা বার আহবায়ক কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন এমন অভিযোগ করেছেন। কাজে বাঁধা দেয়ায় আদালতের এক ঘন্টা বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে আইনজীবি ও কয়েকশত বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে।
জানাগেছে, ১৯৮২ সালে আমতলী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থাপিত হয়। ওই সময় থেকেই আদালতের দখলে এক একর ৪৬ শতাংশ জমি ছিল। ওই জমিতেই সরকার স্থাপনা নির্মাণ করেন। ওই স্থাপনায় আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে। ২০২৩ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান আদালতের জমির সীমানা নির্ধারণ করেন এবং তিন দিকের নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাজ শেষ করেন। হাইকোর্টের নির্দেশ মতে আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ স্থাপনা নির্মাণ করতে গণপুর্ত বিভাগ ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। গত ৮ ডিসেম্বর আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টুনী নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপুর্ত বিভাগ। এ কাজের দেখাভাল করেন বরগুনা জেলা বার আহবায়ক কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনসহ আইনজীবিরা। বৃহস্পতিবার এ বেষ্টনীর নির্মাণ কাজ চলছিল। ওইদিন দুপুর ১ টার দিকে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী কমিশনার ভুমি মোঃ আশরাফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে এ নির্মাণ কাজে বাঁধা দেয়। খবর পেয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান, আইনজীবি ও বিচার প্রার্থীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক ঘন্টা বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে আইনজীবি ও কয়েকশত বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া এলাকার বিচারপ্রার্থী মাসুদ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, হঠাৎ দেখি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে আদালতের প্রাচীর নির্মাণ কাজে বাঁধা দেন। এ সময় আদালতের বিচারক ও আইজীবিরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম বলেন, নিরাপত্তা বেষ্টুনীর কাজে বাঁধা দেয়ায় আইনজীবি ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং বিচারিক কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে।
সিনিয়র আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোঃ মহসিন মিয়া বলেন, আদালত দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত ছিল। দুই বছর আগে উপজেলা প্রশাসন ও আদালত কর্তৃপক্ষ বসে সীমানা নির্ধারণ করেছেন। হাইকোর্টের আদেশ মতে আদালতের নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সীমানায় আদালত কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বেষ্টুনী নির্মাণ কাজ করছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন অযাচিতভাবে সেই নিরাপত্তা বেষ্টুনীর নির্মাণ কাজে বাঁধা দিয়েছেন।
বরগুনা জেলা আইনজীবি সমিতির (বার) আহবায়ক কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, দুই বছর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরিফুর রহমান আদালতের জমির সীমানা নির্ধারণ করে পিলার পুতে দিয়েছেন। ওই পিলার অনুসারে হাইকোর্টের নির্দেশ মতে আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টুনী নির্মাণ কাজ চলছিল। ওই কাজে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বাঁধা দিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, কাজে কোন বাঁধা দেয়া হয়নি। যথারীতি আদালতের নিরাপত্তা বেষ্টুনীর কাজ করতে কোন বাঁধা নেই।