ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে গুলির ঘটনায় এবং একই দিন লক্ষ্ণীপুর ও পিরোজপুরে নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। এদিন দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোডে তাকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে যথারীতি উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক দলগুলো। দিনে-দুপুরে চলন্ত রিকশায় হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ায় অন্য প্রার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা শঙ্কা। তাদের মতে, হাদিকে দুর্বৃত্তদের গুলির ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্পষ্ট হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটেছিল, প্রায় দেড় বছরেও সেই অবস্থান থেকে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। কাজেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক দশা। নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা বাংলাদেশে সব সময় ঘটে থাকলেও এবারের পরিস্থিতি যেকোনো বারের চেয়ে নাজুক। কেননা ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থা এখনো আগের অবস্থানে ফেরেনি, গোয়েন্দাুব্যবস্থাও এখনো পুরোদমে সক্রিয় নয়। অভ্যুত্থানের আগেুপরে দেশের বিভিন্ন কারাগার ভেঙে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি পালিয়ে যান, জামিনও পান। বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও কারাগার থেকে খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের অনেকটাই উদ্ধার করা যায়নি। এ ধরনের পরিস্থিতি যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই বড় হুমকির কারণ। সামপ্রতিক মাসগুলোতে চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের মতো অপরাধে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার বিষয়টি উদ্বেগ তৈরি করে। নভেম্বর মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় একের পর এক টার্গেটেড হত্যাকাণ্ড ঘটে। চট্টগ্রামে একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রচার চলাকালে সন্ত্রাসীরা খুব কাছ থেকে প্রতিপক্ষ গোষ্ঠীর এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীও আহত হন। এইসব ঘটনায় নাগরিকদের মধ্যে এই শঙ্কাও তৈরি হয়েছে যে নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করতে কিংবা নির্বাচন পেছাতে কোনো গোষ্ঠী উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা বের করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।