কিশোরগঞ্জে ঘন কুয়াশায় রবিশস্যের ক্ষতির শঙ্কায় কৃষকরা

এফএনএস (মহিউদ্দিন লিটন; হাওর অঞ্চল, কিশোরগঞ্জ) : | প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:০৬ পিএম
কিশোরগঞ্জে ঘন কুয়াশায় রবিশস্যের ক্ষতির শঙ্কায় কৃষকরা

চলতি সপ্তাহে বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, নিকলীসহ আশেপাশের হাওর অধ্যুষিত উপজেলা গুলোতে মাঝারি ও ঘন কুয়াশার কারণে রবিশস্য চাষিরা বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কারণ গত এক সপ্তাহ যাবৎ ঘন কুয়াশা ও শীতের প্রকোপ বাড়ার কারণে সরিষা, আলু, টমেটোর মতো ফসলে ছত্রাকজনিত রোগ লেট ব্লাইট, পার্পল ব্লচ দেখা দিচ্ছে।  বোরো ধানের চারা হলদে হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শাক-সবজির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে, যা ফলন কমিয়ে দেবে ও অতিরিক্ত কীটনাশক খরচ বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষককূল।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, নিকলীর হাওরে মাঠজুড়ে সরিষা আলু মাসকলাই ছোলা ক্ষীরা শিম টমেটো লাউ বাঁধাকপিসহ রবি ফসলের চাষ হয়েছে। এসব রবিশস্যের পরিচর্যার ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশার কারণে ফসলে বেড়েছে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

বাজিতপুর উপজেলা কৃষিবিভাগের তথ্যমতে, উপজেলায রবিশস্যের আবাদের লক্ষামাত্রা ১৫ হাজার হেক্টর। এখন পর্যন্ত ৩৬৭৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। রবি মৌসুমে বাজিতপুরে ৩৭শ’ ৪৩ জন কৃষকের মাঝে সরকারি প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

দিলালপুর ইউনিয়নের শশেরদিঘী গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, কুয়াশার কারণে সবজিতে ছিটপড়া পড়া(দাগ) রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ফসলের মান নষ্ট হয়। দীর্ঘদিন কুয়াশা থাকলে ফসলে পচন ধরবে।

 উদাতিয়ারকান্দি গ্রামের কৃষক মহিবুল বলেন, কুয়াশার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়। সরিষায় পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়। আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে কুয়াশা রোধ করার চেষ্টা করি।

একই ইউনিয়নের সোনাকান্দা গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, রাতে ফসলের মাঠে উষ (কুয়াশা) পড়ে। এতে বোরো ধানের চারার ক্ষতি হয়। উষ বেশি পড়লে আমরা আলু ক্ষেতে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দেই।

উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়। তাই এ সময় শস্যক্ষেতের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। সকালে রশি টানা দিয়ে বোরো ধানের চারা থেকে কুয়াশার পানি ফেলে দিলে চারা শীত থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া আলু ও টমেটোর প্রতিরোধক হিসেবে ডাইথেন এম ৪৫ ছত্রাকনাশক পরিমাণ মতো পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

টানা ঘন ও মাঝারি কুয়াশায় সূর্যের দেখা না মেলায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলা, সবজিসহ বিভিন্ন রবি ফসল। এ অবস্থায় দুঃশ্চিন্তা আর হতাশায় কাটছে কৃষকের দিন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে এখন রবি শস্য। সরিষা, আলু থেকে শুরু করে ডজনখানেক রবি ফসল চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। অনেক ফসল ঘরে তোলার সময়ও হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে নিয়মিত মাঝারি ও ঘন কুয়াশায় অনেক ফসলেই বেড়েছে রোগ বালাইসহ নানা সমস্যা। ঘন কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আলু গাছের। এছাড়া, ধানের চারা হলদে হয়ে যেতে পারে। সরিষাসহ অন্যান্য ফল ফসলে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

 বাহেরনগর ও তাতালচরের দুই কৃষক বাবু হোসেন ও  হোসেন শেখ বলেন, শীতে বীজতলা নস্ট হয়ে যায়। ঘন কুয়াশায় আলু ক্ষেতে রোগ দেখা দেয়। 

আবহাওয়া অফিস বলছে, পুরো মাস মাঝারি ও ঘন কুয়াশা থাকবে। সামনে হালকা ও তীব্র শৈতপ্রবাহেরও সম্ভাবনা রয়েছে, এতে শীতের তীব্রতা থাকবে, সেই সাথে জানুয়ারির মাঝামাঝি হালকা বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজিতপুর  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  আশরাফুল আলম বলেন, আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে এবং স্বল্প সময়ের কুয়াশার জন্য রবিশস্যের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ভালো ফলন পেতে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে