মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সেনানী, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রথম প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীর উত্তম আর নেই। বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বন্ধ হয়ে গেল।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর।
এ কে খন্দকার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান। যুদ্ধের অব্যবহিত আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং মুজিবনগর সরকারের অধীনে প্রশিক্ষণ ও সামরিক অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক মুহূর্তে মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবেও উপস্থিত ছিলেন এ কে খন্দকার। স্বাধীনতার পর তিনিই হন বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনী প্রধান। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানবাহিনী নতুন করে সংগঠিত হয়। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৩ সালে তাঁকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। পরে ২০১১ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
সামরিক জীবনের পর রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন এ কে খন্দকার। এইচ এম এরশাদের সরকারের সময় তিনি প্রথমবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পুনরায় মন্ত্রিসভায় যোগ দেন।
এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। তিনি ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা, সৎ, সাহসী ও আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক। তাঁর কর্ম, চিন্তা ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।”
১৯৩০ সালে রংপুরে জন্ম নেওয়া এ কে খন্দকারের আদি নিবাস পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা গ্রামে। তাঁর লেখা ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত।
বীর এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে দেশ হারাল এক সাহসী সন্তানকে, আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হারাল এক প্রত্যক্ষ সাক্ষীকে।