হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকি, দিল্লির বক্তব্য মানছে না ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম | প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪০ পিএম
হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকি, দিল্লির বক্তব্য মানছে না ঢাকা

নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকির ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস নোট প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ঘটনাটি যেভাবে ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং বাংলাদেশ তা পুরোপুরি গ্রহণ করছে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তৌহিদ হোসেন এই অবস্থান জানান। তিনি বলেন, ভারতের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা হয়নি এবং ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ শুধু স্লোগান দিয়েছে। কিন্তু প্রেস নোটে বিষয়টি যেভাবে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে ঘটনার গুরুত্ব খাটো করে দেখা হয়েছে।

ঘটনার পটভূমি তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “হিন্দু চরমপন্থী মাত্র ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল কীভাবে কূটনৈতিক এলাকায় এত গভীরে প্রবেশ করতে পারে, সেটিই বড় প্রশ্ন। এটি স্পষ্টভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন।” তাঁর মতে, ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ইস্যু হিসেবে তুলে ধরা অপ্রাসঙ্গিক। তিনি জানান, ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানান তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, দূতাবাসের ভেতরে থাকা কর্মকর্তারা নিরাপত্তা শঙ্কা অনুভব করেছেন এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের চলাচল সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেন, ঘটনাটি নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে জড়ো হয়ে দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দেন এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি তোলেন।

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, কোনো সময়ই হাইকমিশনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা হয়নি বা নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাঁর ভাষায়, “ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সংক্রান্ত দৃশ্যমান প্রমাণ জনসমক্ষে রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতের ভূখণ্ডে অবস্থিত সব বিদেশি মিশন ও কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনার ব্যানারে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল চার থেকে পাঁচটি গাড়িতে করে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। তারা বাংলাদেশবিরোধী স্লোগান দেয় এবং হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হত্যার হুমকি দেয়। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে “শালাকে গুলি করে মার” বলে চিৎকার করতে শোনা যায়। সূত্রগুলোর মতে, দিল্লির কূটনৈতিকপাড়ায় এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে