হাদি হত্যা: দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০২:৪০ পিএম | প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
হাদি হত্যা: দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি ইনকিলাব মঞ্চের

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখযোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখালে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটি।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার না করে তড়িঘড়ি নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। নির্বাচনের আগে বিচার নিশ্চিত করতেই হবে।

হাদি হত্যাকে জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এই ঘটনায় রাষ্ট্র যদি কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জনগণের আস্থা আরও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার ভাষায়, “ওসমান হাদির রক্ত ঝরেছে, আর আমরা যদি খুনিদের বিচার না দেখি, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করছেন এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে হাদি হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান না থাকাকে তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শামিল বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে অতিরিক্ত আইজিপিকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে ঘটনাটিকে গুরুত্বহীনভাবে উপস্থাপনের অভিযোগও তোলেন।

আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রসঙ্গ টেনে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, তদন্তের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো পেশাদার সংস্থার সহায়তা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, অতীতেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়েছে, হাদি হত্যার মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় সেটিই সবচেয়ে যুক্তিসংগত পথ।

দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন আবদুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেন, জনগণের করের টাকায় পরিচালিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদি এখনো খুনিদের অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তাদের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে। একই সঙ্গে সিভিল ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে থাকা আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিও প্রশ্ন তোলেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব। তিনি বলেন, জানাজার মাঠে হাদির প্রতি সম্মান জানানো হলেও এই হত্যার বিচার কীভাবে হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি। “এই নীরবতা আমাদের হতাশ করেছে,” বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, হাদি হত্যার বিচারে দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং আন্তর্জাতিক পেশাদার সংস্থার সহায়তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না। সোমবার বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণাও দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় শরিফ ওসমান হাদি গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন। মাথা ভেদ করে গুলি যাওয়ায় তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিন দিন পর সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় শনিবার (২০ ডিসেম্বর)।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে