জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড (জেএফসিএল)-এ গত ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২৩ মাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর আবার গত ২৪ নভেম্বর/২৫ (সোমবার) সন্ধ্যায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ কারখানায় পুনরায় গ্যাস সংযোগ চালু করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় কারখানা কতৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় কিছু সংখ্যাক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এসব ত্রুটি মেরামত করে অবশেষে ২৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বিকাল সোয়া ৪টায় কারখানায় সার উৎপাদন শুরু হয়। সার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসে এবং স্থানীয়দের মাঝে আনন্দের বন্যা সুবাতাস বইতে শুরু করে।
কারখানা সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানীতে উৎপাদন চালু রাখতে ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে যমুনা সার কারখানায় গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে যমুনায় ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২৩ মাস ৯দিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় সার উৎপাদনের চাকা ঘুরতে শুরু করায় জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের ১৯টি জেলায় ইউরিয়া সারের চাহিদা পুরণ হবে বলে এলাকাবাসি আশা প্রকাশ করছেন। সামনে ইরি-বোরো মৌসুমে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে যমুনা সারকারখানায় উৎপাদিত সার চাহিদানুযায়ী সরবরাহের করা সম্ভব হবে বলে কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিসিআইসি’র নিবন্ধিত সার ডিলার চান মিয়া চানু বলেন, যমুনা সার কারখানা থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ উত্তরাঞ্চলের ১৯ জেলার প্রায় আড়াই হাজার ডিলার সার উত্তোলন করে থাকেন। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় কমান্ডিং এলাকায় সার সংকট দেখা দিয়েছিল। উৎপাদন শুরু হওয়ায় সার সংকট দিন দিন কমে আসবে।
এ বিষয়ে সার কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম তালুকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিক-কর্মচারীরা চরম কষ্টে ছিলেন। গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় কারখানায় উৎপাদন শুরু কারণে সবার মধ্যে নতুন করে প্রাণচাঞ্চলতা ফিরে এসেছে।’
এ ব্যাপারে কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন গ্যাস সংযোগ দেওয়ার পর কিছু যন্ত্রাংশের মেরামত শেষে পূর্ণমাত্রায় অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া উৎপাদনে যেতে পেরে আমরা আনন্দিত। তবে গ্যাস প্রেসার কম। পূর্ণমাত্রায় গ্যাস প্রেসার পেলে কারখানার নিয়মিত উৎপাদন বাড়তে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার সোয়া চারটার দিকে সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে কারখানায় নিয়মিত ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানান।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি ১৯৯১ সাল থেকে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছে। নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২ু৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন হয়। তবে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বর্তমানে উৎপাদন কমে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টনে নেমে এসছে।