ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের মেঘনার তীর ঘেষা অজপাড়া গ্রাম রাজাপুর। অরূয়াইল ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ের ওই গ্রামটিতে রূমিন ফারহানার জনসভা। টিভির পর্দায় গলা ফাটিয়ে বক্তব্য দেওয়ার ওই মহিলাকে নিজেদের গ্রামে সামনা সামনি দেখা যাবে। এটা গ্রামের অনেক নারী পুরূষ বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। এক দফা তারিখ পরিবর্তনে মন ভেঙ্গে যায় তাদের। পরে আবারও রূমিনকে স্বচোখে দেখার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সেই লক্ষেই গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টার পর থেকে মেঘনার পাড়ে জড়ো হতে থাকে লোকজন। আশে পাশে উঁকিঝুঁকি দিতে থাকে বিভিন্ন বয়সের নারীরা। বিকাল ৩টার পর মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। আশপাশের গ্রাম থেকে নদী পথে ও পায়ে হেঁটে সভায় ছুটে আসছেন লোকজন। বিকাল ৪টার পর জনসভায় মানুষের ঢল নামে। মো. নজরূল ইসলামের সঞ্চালনায় ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রূমিন ফারহানা। প্রধান বক্তা ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কঁিচ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক ভিপি মো. জহিরূল হক খোকন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এ.বি.এম মমিনুল হক, শাহবাজপুর ইউপি বিএনপি’র সম্পাদক মো. আমান মুন্সি, প্রচার সম্পাদক জোনায়েদ খান, দপ্তর সম্পাদক মো. জুয়েল মিয়া প্রমূখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রূমিন ফারহানা বলেন, গত ১২-১৩ বছর দেশের অসংখ্য জেলায় বিভাগে খায়ারে বক্তব্য দিতে গিয়েছি। কিন্তু কোন জায়গায় দেখিনি ভাইয়ের সংখ্যা যত, বোনের সংখ্যা তত। ধন্যবাদ দিতে চাই অরূয়াইল ইউনিয়নের তথা রাজাপুর রানীদিয়া গ্রাসবাসীকে। রাজনৈতিক ভাবে কতটা সচেতন হলে ঘন্টার পর ঘন্টা আমার বোনেরা পুকুর ঘাটে নদীর পাড়ে বসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এটা বিএনপি ও ওই দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি ভালবাসার বহি:প্রকাশ। গত ১৫ বছর বড় দু:সময় পার করেছি। ঘটনাই ঘটেনি অথচ মামলার হয়ে গেছে ৪-৫শত ভাই। এমপি নির্বাচন তো দূরের কথা একজন মেম্বারও নির্বাচিত করতে পারিনি। আমার ভাইয়েরা বাড়িতে ঘুমোতে পারেনি। নদীর পাড়ে বিলের ধারে হাওরে জমির আইলে ঘুমাইছে। মোবাইল ফোন অন রাখতে পারেনি। কারণ মোবাইল রাখলে ট্র্যাকিং করে ধরে ফেলবে। আমি বলেছিলাম ২০২৪ সালে নির্বাচন কর হাসিনা। তবে এক বছরের বেশী মসনদে ঠিকবা না। আলহামদুল্লিাহ আল্লাহর দরবারের কোটি কোটি শুকরিয়া। ৭ মাসও ঠিকতে পারেনি।যেটা একটাকা দিয়ে কিনে নিতে চাইছিল। গণভবনটিকে মনে করেছিল তাদের বাপের বাড়ি। সেই গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে কই যে উড়াল দিছে আর আসতে পারেনি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ ও একত্রে থাকি। আমরা যদি সঠিক মানুষকে রাজনীতিতে নির্বাচিত করতে পারি ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে আর দ্বিতীয় হাসিনা তৈরী হইতে দিব না। সংস্কার প্রসঙ্গে রূমিন ফারহানা বলেন, অনেক সংস্কারের কথা হচ্ছে। সংস্কার ভালো জিনিষ। সংস্কার দেশের ও মানুষের জন্যই করা হয়। তবে প্রথম সংস্কারের কথা বলেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৬ সালে তিনি ভিশন টু-জিরো থ্রি-জিরো বলে একটা দলিল প্রকাশ করেছিলেন। আজকে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। আমরা বিএনপি’র নেতা কর্মীরা কিন্তু সংস্কারের বিরূদ্ধে না। দেশবাসীকে জানাতে চাই এই সংস্কারের জনক কিন্তু খালেদা জিয়া। তারপরে বিএনপি’র কান্ডারি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র জনাব তারেক রহমান কিন্তু সংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। সংস্কার নিশ্চয় হবে। তবে সেটা মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা। আপনারা যাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন কেবল মাত্র তারাই সংস্কার করবেন। আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে? আপনাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? উন্নয়ন কেমন হবে? কিভাবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে? কিভাবে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে? কিভাবে মানুষের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করা যাবে? বিএনপি’র নেতা কর্মীদের উদ্যেশ্যে বলেন, আমাদের অদৃশ্য শত্রƒ আছে। বিএনপি’র মত দলকে ভাঙ্গা যায় না। আপনারা কোন ধরণের অন্যায় বাণিজ্য ও মামলা বাজির সংগে নিজেকে জড়াবেন না। আজকে মানুষকে একহাত পানির নীচে ফেলবেন কালকে সেই মানুষ আপনাকে ১০০ হাত পানির নীচে ফেলবে। মনে রাখবেন বিএনপি কিন্তু এখনো ক্ষামতায় আসেনি। মানুষের চোখের তাকিয়ে কথা বলবেন না। মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন। মানুষকে কাছে টানুন। ভালো বাসুন। মানুষের মন জয় করবেন। রূমিন ফারহানা বলেন, আমি যদি নির্বাচিত হয় ইনশাল্লাহ আপনাদের সকল দাবী দাওয়া আমি পূরণ করব। তিনি ধামাউড়া-দুবাজাইল, দুবাজাইল-কাকুরিয়া-রানীদিয়া ও রানীদিয়া-অরূয়াইল বাজার পর্যন্ত এমন ভাবে রাস্তা নির্মাণ করা ঘোষণা দিয়েছেন যাতে করে আগামী ৫০ বছর কারো কাছে যেতে না হয়। সরাইল-অরূয়াইল সড়কের সংস্কার কাজটি করতে ডিও লেটার দেওয়ার উল্লেখ করে বলেন, আপনাদের ভোটে সমর্থনে নির্বাচিত এমপি হতে পারলে সকল উন্নয়নমূলক কাজ করে দিব। আপনাদের এখানে একটি স্কুল করার চিন্তাও আমার মাথায় আছে। একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের প্রতিশ্রতিও দিয়েছেন তিনি। জেলা উপজেলার নেতারা বলেন, আর রাতের ভোট এই দেশে হবে না। আর বিনা ভোটে ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হতে পারবে না। আপনারা কাজ ও উন্নয়ন চাইলে ব্যারিষ্টার রূমিন ফারহানার সাথে থাকুন। আমাদের ভাগ্য ভাল। তাই রূমিন ফারহানার মত নেতৃ আল্লাহ মিলিয়েছেন। আপনারা উনার পেছনে থেকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করলে আর পিছিয়ে থাকতে হবে না।