দিঘলিয়ায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষ শুরু

এফএনএস (সৈয়দ জাহিদুজ্জামান; দিঘলিয়া, খুলনা) : | প্রকাশ: ৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:৪৭ পিএম
দিঘলিয়ায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষ শুরু

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে ৫০ একর জমিতে সমলয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতির ফলে ধান চাষে শ্রমিক সংকট নিরসন, উৎপাদন খরচ ও সময় বাঁচবে বলে জানা গেছে। এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরও সমৃদ্ধ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা তৈরি ও ধান মাড়াই যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। দিঘলিয়া উপজেলায় যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে ৫০ একর জমিতে সমলয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতির ফলে ধান চাষে শ্রমিক সংকট নিরসন, উৎপাদন খরচ ও সময় বাঁচবে বলে জানা গেছে। এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পাড়লে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরও সমৃদ্ধ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা তৈরি ও ধান মাড়াই যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রহ্মগাতী গ্রামে সমলয়ে চাষাবাদের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ। দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০ একর জমিতে সমলয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। সমলয়ে চাষাবাদে আমরা ব্রহ্মগাতী গ্রামের ৭১ জন কৃষককে সম্পৃক্ত করেছি। তাদের জমিতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদের শুরুতে আমরা ট্রেতে বীজতলা করেছি। প্রতি বিঘায় প্রচলিত চাষাবাদে হাইব্রিড ধানবীজ ৪ কেজি ও উফশী ধানবীজ ৬ কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সেখানে সমলয়ে চাষাবাদে বিঘা প্রতি বীজ খরচ অর্ধেক হয়েছে। বীজে কৃষকের খরচ বেঁচেছে। এ চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘাপ্রতি খরচ হবে মাত্র ৫শ টাকা, শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। জমিতে আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে কৃষকের প্রায় ৭০ শতাংশ শ্রমিক খরচ কমে যাবে। এক্ষেত্রে অন্তত ৮-১০ জন শ্রমিকের মজুরি সাশ্রয় হবে। এ ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে দেওয়া হবে। এ মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে অন্তত ৭-৮ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের বিঘাপ্রতি অন্তত ১০-১২ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া এ পদ্ধতির চাষাবাদে বিঘাপ্রতি হাইব্রিডে ২৪ মণের স্থলে ৩৫ মণ ধান উৎপাদিত হবে। উফশী জাতে ১৬-১৮ মণের স্থলে ২৫-২৮ মণ ধান উৎপাদিত হবে। দিঘলিয়া ইউনিয়ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন ও মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমার ব্লকের ব্রহ্মগাতী এলাকায় রবি/২০২৩-২৪ মৌসুমে সমলয় চাষাবাদে ৭১ জন কৃষককে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সবকিছু যন্ত্রের মাধ্যমে হবে। তিনি আরও বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বাড়ে। একসঙ্গে চারা রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে এবং একসঙ্গে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। তবে এ সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকরা লাভজনক হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ব্রহ্মগাতী গ্রামের কৃষক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, এবার মেশিনের সাহায্যে ট্রেতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এভাবে কখনো আবাদ করিনি। আর আগে জমি তৈরি করে ধানের বীজ লাগাইছিলাম। এ বছর কৃষি অফিস সরকারিভাবে বিনামূল্যে হাইব্রিড (১২০৩) ধানের বীজ দিচ্ছে, তা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছে আবার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কেটেও দেবে। আশা করি ভালো ফলন পাওয়া যাবে। একই গ্রামের কৃষক অজয় চন্দ্র দাস বলেন, দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী কয়েক বিঘা জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে বীজতলা তৈরিতে অর্ধেক বীজ লেগেছে। এতে বীজ খরচ সাশ্রয় হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান আবাদ করেছি। এতে মাত্র ৫শ টাকা খরচ হয়েছে। এ চাষাবাদে খরচ সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন ধানের ফলনও ভালো হবে। তবে ভালো ফলন পেলে অধিক লাভবান হবে বলে আশা করছি। উল্লেখ্য, দিঘলিয়ায় এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে নির্ধারিত কৃষকদের মাঝে ৬০০ কেজি ধান বীজ, সাড়ে ৪ টন ইউরিয়া, ২ টন ডিএপি ও আড়াই টন এমওপি সার সরবরাহ করা হয়েছে। বীজতলা তৈরিতে সাড়ে ৪ হাজার ট্রে সরবরাহ করা হয়েছে। ধানের চারা বেড়ে উঠছে বীজ তলায়। জমিন তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচিত কৃষকেরা। ধানের চারা খুব শীগ্রই রোপন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম জানান, সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে চাইছে। এ পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে