তালতলী ও আমতলী উপজেলার সর্বত্র সপ্তাহ জুরে ঘন কুয়াশার কারনে ঝড়ে যাচ্ছে পান পাতা। বহু কষ্টে ধার দেনা এবং এনজিও’র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বরজ করার পর শীত মৌসুমের শুরুতেই চোখের সামনে শ্রমিকদের ঘামে শ্রমে ফলানো পান পাতা এভাবে ঝড়ে যাওয়ায় পান চাষীদের সর্বনাশ হতে যাচ্ছে। তালতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তালতলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র পঁচাকোড়ালিয়া ও ছোটবগী ইউনিয়নে মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছেন চাষীরা। এদিকে আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ১৩৩ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী চাষ হয়ে থাকে গুলিশাখালী, চাওড়া, আঠারগাছিয়া ও আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে। শীত মৌসুমের শুরুতে ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারনে বরজের পান পাতা লাল হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। পান চাষীরা শৈত্য প্রবাহ এবং কুয়াশার হাত থেকে রক্ষার জন্য পুরো বরজ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়ার পরও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে এক এক জন পান চাষী বরজ তৈরী করেছেন। নিজেদের চোখের সামনে এভাবে বহু ঘামে ও শ্রমে তৈরী করা তাদের পানের বরজের পাতা চোখের সামনে লাল হয়ে ঝড়ে যেতে দেখায় অনেক চাষীই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ও ছোটবগী এবং আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী, ডালাচারা, চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, ঘটখালী, উত্তর ঘটখালী, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা, ঘোপখালীসহ বিভিন্ন গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে ঝড়ে যাওয়া পান বরজের বিবর্ন চিত্র। বরজের সাথে পানের লতা দাড়িয়ে থাকলেও ঠান্ডায় পান পাতা শুকিয়ে লাল হয়ে ঝড়ে মাটিতে পড়ে আছে। গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোছখালী গ্রামের পান চাষী কপিল মাঝি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন ভাই ধার দেনা কইর্যা ১০ লক্ষ টাকায় ৭০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করেছি। দ্যাখেন আমার বরজের কি অবস্থা হয়েছে। শীত আর কুয়াশায় বরজের সব পান পাতা লাল হয়ে শুকিয়ে ঝড়ে পড়েছে। এ অবস্থা থাকলে বছর শেষে আমি ২ লক্ষ টাকাও ঘরে তুলতে পারবো না। গুলিশাখালী গ্রামের নজরুল প্যাদা বলেন, এনজিও’ডডে গোনে ৫লক্ষ টাহা আইননা হেই টাহা খরচ কইর্যা ৪০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করছি। শীত আর কুয়াশায় সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। পাতা সব ঝইর্যা নষ্ঠ অইয়া গ্যাছে। এহন এনজিও’র টাহা দিমু ক্যামনে হেই চিন্তায় আছি। ঘটখালী গ্রামের পান চাষী আক্কাচ হাওলাদার বলেন, রিমালের সময় বইন্যায় বর ভাইঙ্গা সব শ্যাষ অইয়া গেছিল। ধার দেনা আর এনজিও’ডডে গোনে টাহা আইন্যা আবার বর ঠিক হরছি। এ্যাহন শীত কুয়াশা আর বাতাসে সব পান পাতা নষ্ট অইয়া যাওয়ায় মোগো অইছে সর্বনাশ। এ্যাহন পোলা মাইয়া লইয়া কি খামু আর কি দিয়া এনজিও’র কিস্তি দিমু এ্যাহন আছি হেই চিন্তায়। এভাবে শত শত পান চাষী এবছর চলতি শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা আর শীতের কারনে বরজের পানের ক্ষতি হওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে পরেছে। পানের বরজের পান নষ্ট হওয়ায় তার প্রভাব পরেছে বাজারেও। তালতলী শহরের পান বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক চল্লি (৩৬টি পান) বড় সাইজের বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ছোট সাইজের এক চল্লি পান ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ক্রেতাও এখন হিসাব করে পান কিনছেন। খুরিয়ার কেয়াঘাট এলাকার নারী পান ক্রেতা ছফুরা বেগম বলেন, পানের দাম দুই তিন গুন বাইর্যা গ্যাছে। যেই পান ১ মাস আগে ২০ টাহায় কেনতাম এ্যাহন হেই পান ৫০-৬০ টাহায় কিনি। এ্যাহন আর আগের মত পানি কিনি না। খাওয়াও কমাইয়া দিছি। তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর মো. ছালেহ বলেন, ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত শীত এবং আবহাওয়া মেঘলা থাকার কারনে পান গাছে ছত্রাকের আক্রমন দেখা দেয়। এরকম হলে স্বল্প মাত্রায় জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়াও শৈত্য প্রবাহের হাত থেকে বরজ রক্ষার জন্য পলিথিন টানিয়ে বেড়া দেয়া হলে ছত্রাকের আক্রমন কম