সারদায় সমাপনী কুচকাওয়াজ

‘নিজেদের জনবান্ধব পুলিশে রুপান্তরিত করবেন’

এফএনএস (এস.এইচ.এম তরিকুল ইসলাম; রাজশাহী) :
| আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম | প্রকাশ: ১২ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম
‘নিজেদের জনবান্ধব পুলিশে রুপান্তরিত করবেন’

 বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা বিপিএম বলেছেন, নতুন পথের যাত্রা পথিক হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে আজকে যে পুলিশ সদস্যরা যুক্ত হতে যাচ্ছেন আপনারা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ধারণ করে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব দিয়ে জনবান্ধব পুলিশ সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। আর এটিকে এক কথায় বলতে গেলে নিজ নিজ কর্মস্থলে গিয়ে আপনারা জনদরিদী পুলিশি দায়িত্ব পালন করে জনবান্ধব পুলিশে নিজেদের রুপান্তরিত করবেন। তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে দেওয়া প্রশিক্ষণ সফল হবে। রবিবার (১২ জানুয়ারি) সকালে রাজশাহীর সারদাস্থ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ১৬৭তম টিআরসি ব্যাচের ৩৩৪ জনের মনোজ্ঞ প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ববক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রায় ৩ বার সমাপণী কুচকাওয়াজের তারিখ পরিবর্তন করে সব ধরনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রবিবার অনুষ্ঠিত সেই কাঙ্খিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন অভিবাদন গ্রহণ ও বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী টিআরসিদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত আইজিপি) মাসুদুর রহমান ভূঞা বিপিএম।

প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গত ২৪ জুন ২০২৪ হতে শুরু হওয়া মৌলিক প্রশিক্ষণের আজ শেষ দিন। এখন থেকে আপনারা প্রশিক্ষিত একঝাঁক মেধাবী ও চৌকস পুলিশ সদস্য। মাঠ পর্যায়ে সরাসরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ও নাগরিকের সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে যাচ্ছেন। বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের দায়িত্ব বহুমাত্রায় বেড়ে গেছে। জটিল হয়েছে কর্মপরিবেশ তার সাথে বেড়েছে দায়বদ্ধতা। এর মধ্যেই জনগণের নিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা টেকসই করা বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার।

মাসুদুর রহমান ভূঞা বলেন, মাঠে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি দক্ষ পুলিশ সদস্য তৈরি করতে আমাদের প্রশিক্ষণে সংযোজিত হয়েছে নতুনত্ব ও আধুনিকতা। আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার রক্ষা, পুলিশের ভূমিকায় নারী ও শিশুদের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষের প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। নৈতিক, মানবিক এবং মূল্যবোধ সম্পন্ন জনমুখী দেশপ্রেমিক নবীন পুলিশ সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের প্রয়াস ছিল সর্বোচ্চ। 

প্রধান অতিথি বলেন, এসব নবীন পুলিশ সদস্যগণ তাদের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা, কর্মস্পৃহা এবং সেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা অর্জন করে দেশ মাতৃকাকে সমৃদ্ধ করবে। আর একটি স্বনির্ভর রাষ্ট্র বিনির্মাণে উন্নত স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুনিশ্চিত করতে পারলে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে এবং উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। 

তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে আস্থা এবং পুলিশের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ প্রতি মুহূর্তে নিরলসভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, মাদক নির্মূল, সন্ত্রাস মোকাবেলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এছাড়াও বৈদেশিক শান্তিরক্ষা মিশনে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ পুলিশের সুনাম রয়েছে। দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে অগণিত পুলিশ সদস্য। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, টিআরসির অভিভাবকবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে প্রধান অতিথি কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। পরে প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী টিআরসিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এ প্রশিক্ষণে ৩৩৪ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী হিসেবে সাজ্জাদুল ইসলাম (পিএ/৫৪৪), বেস্ট একাডেমিক হিসেবে সুমন আলী (পিএ/৫৪২) ও বেস্ট ইন ফিল্ড এক্টিভিটিজ এবং বেস্ট শ্যুটার পৌরব চন্দ্র রায় (পিএ/১৪৫) ছাড়াও নির্বাচিতদের হাতে ক্রেষ্ট তুলে দেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা বিপিএম। 

উল্লেখ্য সমাপণী কুচকাওয়াজে অংশ গ্রহণকারী ৬ মাস মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষনার্থী কনষ্টেবলদের প্রশিক্ষণ আজ থেকে ২/৩ মাস আগেই শেষ হয়েছে। তবে নানা ধরণের জটিলতায় তাদের সমাপণী কুচকাওয়াজের তারিখ কয়েক বার পরিবর্তন করা হয়। এতে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে