বিতর্কিত কমিটি বাতিলের দাবী

সরাইল বিএনপি’র একাংশের ঝাঁড়ু মিছিল

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:২৮ পিএম
সরাইল বিএনপি’র একাংশের ঝাঁড়ু মিছিল

গত ৩-৪ দিন ধরে উত্তপ্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপি। সদ্য প্রকাশিত উপজেলা বিএনপি’র কমিটিকে পারিবারিক, অরাজনৈতিক, চুর, ডাকাতে ভরা বিতর্কিত বলছেন একাংশের নেতা কর্মীরা। সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকসহ পদবঞ্চিত অর্ধশতাধিক গুরূত্বপূর্ণ পদধারী সাবেক নেতারা ক্ষোভে রাজপথে নেমেছেন। বিতর্কিত ওই কমিটি বাতিলের দাবীতে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে ঝাঁড়ু মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন তারা। তারা বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি আনিছ ঠাকুর ও সাধারণ সম্পাদক এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপুর বিরূদ্ধে। ভূয়া ও পকেট কমিটিকে দ্রূত বাতিল করে নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানিয়েছেন বিক্ষুদ্ধ নেতা কর্মীরা। দাবী না মানা পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আগামী ১৮ জানুয়ারি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের বিশ্বরোড মোড়ে অবস্থান করে ভূয়া ভোটারদের প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছেন। 

দলীয় ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সরাইল বিএনপি’র দ্বন্ধ দীর্ঘদিনের। চুড়ান্ত অনুমোদনের পরও যখন কমিটির ৯৯ সদস্যের নাম প্রকাশিত হচ্ছিল না। তখনই সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি’র একাংশের নেতা কর্মীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তাই এই কমিটি বাতিলের দাবীতে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল দুপুরে কয়েকশত নেতা কর্মী সরাইল সদরে ঝাঁড়ু মিছিল বের করেন। মিছিলটি সরাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরূ হয়ে হাসপাতালের মোড় ও সকাল বাজার এলাকা ঘুরে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপি’র ২৭ বছরের সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সহসভাপতি মো. জহির উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা সরাইল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক ভিপি মো. উসমান খান, মো. আফজাল হোসেন, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক-২ নাজমুল আলম খন্দকার মুন্না ও ছাত্রদলের সাবেক সম্পাদক সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার প্রমূখ। বক্তারা বলেন,  জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় চুড়ান্ত অনুমোদনের ৪ মাস পর গত ৪-৫ দিন আগে প্রকাশিত হয় সরাইল বিএনপি’র ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটিতে স্থান হয়নি সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সহ দলটির লড়াই সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকে জেল জুলুম ও নির্যাতন ভোগ করা নেতাদের। সভাপতি সম্পাদক টাকার বিনিময়ে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের দোসরদের পরামর্শে এই কমিটি করেছেন। দলের দূর্দিনে নির্যাতিত নিপিড়িতরা এখন হয়েছেন বঞ্চিত। সরকার বিরোধী মিটিং মিছিলে যারা আসেনি। আন্দোলনের কথা বললেই বলত আমার ক্যান্সার। তাবলীগে চলে যাব। এই সব সুবিধাবাদী লোক এখন কমিটিতে। আমরা এই কমিটি মানি না। মানবও না। আমাদের দফা এক। দাবীও এক। ব্যবসায়ি বাটপার আনিছ ঠাকুর ও তপুকে এই কমিটি বাতিল করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত এই দাবী আদায় না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজপথে আমাদের সংগ্রাম চলবে। আনোয়ার হোসেন বলেন, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে তালিকাভুক্ত ডাকাত আর চুরের কমিটি মানি না। কর্মসূচি থাকলে সভাপতি তাবলীগে আর সম্পাদকের গুরূত্বপূর্ণ মামলা থাকত। তিনি টাকার কুমির হয়েছেন। উনারা সাজানো মামলায় ২৫০-৩০০ লোককে আসামী করেন। আবার লাখ লাখ টাকায় এফিডেভিটের মাধ্যমে বাতিল করেন। মোটা বাণিজ্যে কমিটি করেছেন। ১৫ বছরে সম্পাদক তপু সাহেব মাত্র ১টি মামলার আসামী (চার্জশীটে যুক্ত)। আর আমি সম্পাদক ১৭টি মামলার আসামী। বিএনপি করার অপরাধে বেতন বন্ধ। জেলে কাটিয়েছি দীর্ঘদিন। তবুও সরাইল ছাড়িনি। ছাড়বও না। আপনারা যে কাজ করেছেনে। বেডা হইলে এখন সরাইল আসেন। বিএনপি’র নেতা কর্মীরা মনগড়া কমিটির মজা বুঝাইয়া দিবে। বাঁচতে চাইলে এই কমিটি দ্রূত বাতিল করূন। ওদিকে একই দাবীতে গত মঙ্গলবার রাতেও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও পথ সভা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপু বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক নির্দেশে গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে কমিটি। ভোটে উনারা অংশ গ্রহণ করেননি। ত্যাগীদেরই মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিএনপি বড় দল সবাইকে তো কমিটিতে রাখা যাবে না। তাই তারা ক্ষুদ্ধ হবেনই। ২০২১ সালেও এমন ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন কিছু লোক। পরে সকলে মিলে মিশেই কাজ করেছি। ২৮ অক্টোবর-২০২৩ থেকে ৫ ই আগষ্ট-২০২৪ পর্যন্ত কোন আন্দোলনে আনোয়ার হোসেনসহ অনেককে দেখা যায়নি। যদি একটি ছবি দেখাইেতে পারেন ভুল সংশোধন করব। বিচারও দিব। সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্বেও আনোয়ার হোসেন কমিটিতে নেই কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তপু বলেন, উনি সভাপতি হওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। নতুবা তিনি থাকবেন না। বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। এখানে সভাপতি করা বা শর্ত পূরণ করে তো পদ দেয়া যায় না। 

প্রসঙ্গত: গত ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল কালিকচ্ছের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে আনিছুল ইসলামকে সভাপতি, এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপুকে সাধারণ সম্পাদক ও ডি এম দুলালকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে সরাইল উপজেলা বিএনপি’র ৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এর প্রায় আড়াই বছরেরও অধিক সময় পর গত ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জেলার আহবায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত ১০১ সদস্যের সরাইল বিএনপি’র কমিটির অনুমোদন দেন। এরমধ্যে সভাপতি আনিছ ঠাকুর ও সম্পাদক এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপুর নাম প্রকাশ করা হলেও বাকি ৯৯ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এতে করে অপজিট গ্রূপসহ গোটা বিএনপিতেই একটা সমালোচনা ছিল। গত ২-৩ দিন আগে ১০১ সদস্যের কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর চরম ভাবে ক্ষিপ্ত হয় আনোয়ার হোসেন তার অনুসারি এমনকি খোদ বর্তমান কমিটির অনেক সদস্যও।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে