নিজের আহার- বাস জনিত ব্যস্ততাকে হেয় করে সার্বজনীন সেবা কাজে নিষ্ঠাবান হয়ে যুক্ত থাকার মানুষ আমাদের সমাজে বিরল। তেমনি একজন মানুষ ছিলেন চাঁদপুর বাণিজ্যিক শহর পুরান বাজারের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ফয়েজ আহমেদ মন্টু। শিল্প সংস্কৃতি খেলাধুলাসহ যেকোনো সেবামূলক কাজ এমনকি বিভিন্ন নাগরিক অধিকার আদায়ের প্রশ্নে তিনি ছিলেন সোচ্চার ও আপসহীন। গত ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে আমাদের এই প্রিয় মানুষ ফয়েজ আহমেদ মন্টু দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেন। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যুতে যে শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়। চাঁদপুরের সংস্কৃতিক অঙ্গন ও সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ডের পরিচিতজন বিশিষ্ট সংগঠক এবং ব্যবসায়ী ফয়েজ আহমেদ মন্টুর স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার রেখে যাওয়া প্রাণের সংগঠন চাঁদপুর পুরান বাজার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন পরিষদ আয়োজন করে এই স্মরণ সভার। বৃহস্পতিবার সকালে (১৬ জানুয়ারি ২০২৫) পুরান বাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন,ফয়েজ আহমেদ মন্টু আমাদের নাগরিক অধিকার আদায়ের একজন সোচ্চার অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর সততা কর্ম মননশীলতা কে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা স্মৃতিচারণ করলেও রেখে যাওয়া স্মৃতি শেষ করা যাবে না। চাঁদপুর তথা পুরাণবাজারের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ব্যবসাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করলে মন্টু ভাইকে আমরা দেখতে পাই। তাঁর মৃত্যুর পর এসব রেখে যাওয়া স্মৃতি আমাদের প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়। আমরা নির্ধিধায় বলতে পারি,পুরান বাজারবাসী বহুমুখী প্রতিভাধর একজন মানুষকে হারালো। যার শূণ্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। একজন সৎ আদর্শবান দক্ষ সংগঠক ও প্রতিভাবান প্রগতিশীল একজন মানুষ হিসাবে তাঁর পরিচিতি ছিল সর্বমহলে।ছাত্র জীবনে তিনি বাম ঘর না রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একজন পরিশ্রমী সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। শিক্ষানুরাগী সাংস্কৃতিক কর্মী, সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ড,নাগরিক অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামে মন্টু ভাই ছিলেন সক্রিয়।চাঁদপুরের নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলন, ট্রাকঘাট প্রথা বিলুপ্তি,পুরান বাজার নতুন বাজার সেতু নির্মাণ, সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ, পুরান বাজারের স্থায়ী লঞ্চঘাট নির্মাণ, চাঁদপুর শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসের দাবি,পুরান বাজারে কলেজ প্রতিষ্ঠা, কমিউনিটি পুলিশিংসহ অনেক কিছুর সাথেই জড়িত ছিলেন ফয়েজ আহমদ মন্টু। তিনি সব সময় ভালো কাজের পরামর্শ দিতেন। তাই তিনি মানুষের মনের মনিকোঠায় বেঁচে থাকবেন কাল-মহাকাল।আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডে আমরা একজন অভিভাবককে হারিয়েছি। স্মরণসভা কমিটির আহ্বায়ক ও চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে এবং চাঁদপুর আনন্দ ধ্বনি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ মিন্টুর পরিচালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার,চাঁদপুর কমিটির মহাসচিব বিএম নুরুজ্জামান, স্মরণসভা উপ কমিটির সদস্য সচিব,বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মোঃ মুজিবুর রহমান,বাসদ সমন্বয়ক শাহজাহান তালুকদার,ব্যবসায়ি রমেশ চন্দ্র সাহা দুলাল,রিভারসাইড কিন্ডারগার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল কালাম সরকার,চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক গোপাল চন্দ্র সাহা, পুরান বাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক গনেশ চন্দ্র দাস, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী হোসেন, অনুপম নাট্য গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ মন্ডল, উদয়ন কচিকাঁচা মেলা সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ দাস, বঙ্গজ সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সভাপতি রোটাঃ নাসির খান, সংগঠক জাকির হোসেন খান শিপন, সাবেক পৌর প্যানেল চেয়ারম্যান ফরিদ কমিশনার, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলন চাঁদপুরের আহবায়ক আজিজুর রহমান,ভাই ভাই স্পোটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বাদল, সাংস্কৃতিক কর্মী স্বদেশের বিপ্লব দাস প্রমুখ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ মন্টুর ছোট ভাই মোঃ জাকারিয়া বতু। শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন মোঃ নাজমুল হোসেন। আলোচনা পর্ব শেষে শোক ও স্মরণবার্তা পাঠ করেন মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরতি দাস। পরে স্মরণসভা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে শোক ও স্মরণ সভাপত্রটি প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ মন্টুর বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পিঙ্কি, ছেলে এমদাদ আহমেদ অভি ও ছোট মেয়ে ডাঃ কাউসার ফেরদৌস ইন্নির হাতে তুলে দেন আলোচক বৃন্দ । ফয়েজ আহমেদ মন্টুর ঘনিষ্ঠজন মেম্বার সুভাস সাহা, নন্দন স্টুডিও'র টিটো, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার মিতা ঘোষ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ধ্রুব রাজ বণিকসহ সাংস্কৃতিক - ক্রীড়া অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।