সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্তরে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব মেলা শুরু হচ্ছে হচ্ছে (১৮ জানুয়ারী) আজ। মেলার উদ্ধোধন উপলক্ষে ফাউন্ডেশন চত্তরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। ফাউন্ডেশনের ময়ুরপঙ্খি কারুমঞ্চে আজ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্ধোধন করবেন। প্রায় কোটি টাকার বিশাল বাজেটের কোন প্রকার নতুনত্ব ছাড়াই গতানুগতিক পুরানো সব আচার অনুষ্ঠান (ইভেন্ট) দিয়েই সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্তরে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই মেলার আয়োজন একই ঘরনার গতাগতিক হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্তর ঘুরে দেখা গেছে, মেলা উপলক্ষে ফাউন্ডেশন চত্তরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, মেলায় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী প্রদর্শনের জন্য প্রায় ১’শটি স্টল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কর্মরত কারুশিল্পীদের জন্য ৩২ টি বিশেষ স্টল বরাদ্ধ রয়েছে। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই মেলায় প্রতি বছর আবহমান গ্রামবাংলার গ্রামীণ খেলাধুলা, বিবাহের কনে দেখা, নববধূর গায়ে হলুদ, বর যাত্রা, জামাইকে পিঠা খাওয়ানো সহ লালিত ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আচার-আচরণ ও অসংখ্য বিলীয়মান হস্ত, কারুশিল্প প্রদর্শনী ও বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও লোকজমঞ্চে প্রতিদিন জারি, সারি, বাউলগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মাইজভাণ্ডারি, লালন সংগীত, হাসনরাজা, মুর্শিদী, পালাগান, গায়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের মণিপুরি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কর্মরত কারুশিল্পীদের জন্য বিশেষ স্টলে সোনারগাঁয়ের আব্দুল আউয়াল মোল্লার কাঠের দারুশিল্প, সোনারগাঁয়ের নকশিকাঁথা শিল্পী হোসনে আরার সুইসুতা শিল্প, মাগুরা ও নওগাঁর শোলাশিল্প, চট্টগ্রামের তালপাখা ও নকশিপাখা, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, সিলেট ও মুন্সিগঞ্জের শীতলপাটি, বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কারুপণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়াম্যান কবি শাহেদ কায়েস বলেন, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিবছর মাসব্যাপী যে লোকজ মেলার আয়োজন করে আসছে সেটি একই ঘরনার হয়ে যাচ্ছে, তাতে কোন ধরনের নতুন বৈচিত্র নেই। আমার মনে হয় এখানে কিছু বৈচিত্র আনা উচিত। ফাউন্ডেশনের এটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা উচিত। এটা হতে পারে থিম ভিত্তিক। ফাউন্ডেশন লোক ও কারুশিল্পের উন্নয়নে যে কাজ করছে, লোক শিল্পীদের এখানে নিয়ে আসছেন, মাসব্যাপী এরা থাকছেন, কাজ গুলো তারা করছেন, এটা অবশ্যই একধরনের সাপোর্ট। কিন্তু পাশাপাশি থিম ভিত্তিক পার্টিকুলার কোন একটা শিল্পকে যেমন, এটা সখের হাড়ি বা সোনারগাঁয়ের হোসনে আরার নকশিকাঁথা যেটাই হোক। একেক বছর একেক শিল্পকে হাইলাইট করা উচিত। এটাকে থিম হিসেবে নিয়ে নেয়া এবং তার উন্নয়নের জন্য নানা ভাবে প্রচার-প্রচারনা চালানো উচিত। মেলায় এভাবে থিম ভিত্তিক কিছু বৈচিত্র কিংবা অন্য যে কোন বিষয়ে বৈচিত্র আনা উচিত। সোনারগাঁও সাহিত্য নিকেতনের সভাপতি আসমা আখতারি বলেন, নতুনত্ব কিছুই নাই। আগের চেয়ে অনেক কিছু বাদ পরেছে। বাস্তব ভিত্তিক অনুষ্ঠান নেই। ফাউন্ডেশনের মাসব্যাপী এই মেলাটি গতানুগতিক হয়ে যাচ্ছে। কোন নতুনত্ব নেই। সরকারী পর্যায়ের এতো বড় একটি মেলা মানুষের মন জয় করার জন্য অনেক নতুন-নতুন চমক আনতে পারতো। এদেশের চিরাচরিত বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির অনেক কিছুই প্রায় হারিয়ে গেছে। এই সম্পদ গুলো খুজে খুজে এনে মেলায় দর্শকদের সামনে প্রদর্শন হতে পারে। এটাওতো একটা চমক হতে পারে। বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার বলেন, সরকারের একটি উল্লেখ যোগ্য পদক্ষেপ হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব সমাজ গঠন করা। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আমরা মেলায় পাটের এবং কাপড়ের বেগ ব্যাবহার করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করছি। একই সাথে তারুণ্যের উৎসব নিয়েও কাজ করবো আমরা। আমরা চেষ্টা করছি মাসব্যাপী এই কারুশিল্প মেলার মাধ্যমে চিরায়ত বাংলার কারুশিল্পীদের কারুপন্য বিশ্ব বাজারে যেনো পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়। এবারও নতুন হিসেবে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ শীর্ষক বিশেষ অনুশীলন/ প্রদর্শনী চত্বর স্থান পাবে।