নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি: রমজান ঘিরে দুশ্চিন্তা

সম্পাদকীয় | প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি: রমজান ঘিরে দুশ্চিন্তা

বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এক দীর্ঘমেয়াদি সংকটের রূপ নিয়েছে। বিশেষত নিম্নবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য এটি চরম দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের ন্যূনতম আহার নিশ্চিত করতেও তাদের সীমাহীন কষ্ট করতে হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক কমানোর উদ্যোগও বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের বাজার ব্যবস্থার অসংগঠিত অবস্থা এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিচ্ছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কিংবা চাহিদা বাড়ার সময় পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা একটি সাধারণ চিত্র হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালে পবিত্র রমজান মাস আসন্ন হওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শবেবরাত ও রোজা ঘিরে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, যদিও সরবরাহ চেইনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে ডাল ও চিনি সরবরাহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১৫ হাজার টন চিনি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও চলতি অর্থবছরে ২.৮৮ লাখ টন মসুর ডাল এবং ১.৪৪ লাখ টন চিনি ক্রয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এতেও রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। ব্যবসায়ীদের একাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। রমজান মাসে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন ছোলা, ভোজ্য তেল প্রভৃতি অযৌক্তিকভাবে দাম বৃদ্ধির শিকার হয়। বাজারে যুক্তি ও নীতি-নৈতিকতার অভাব স্পষ্ট। সংকট থাকুক বা না থাকুক, পবিত্র রমজান ও ঈদের মতো উৎসব সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের মুনাফার প্রতিযোগিতা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের বাজার মনিটরিং কমিটিকে আরও সক্রিয় হতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ট্যারিফ কমিশনের মতো সংস্থাগুলোর ভূমিকা আরও জোরদার করতে হবে। বাজারে সরকারের কার্যকর উপস্থিতি বাড়ানো ছাড়া এই সংকট কাটানো সম্ভব নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। অবশেষে, রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকারের প্রস্তুতি প্রশংসনীয় হলেও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের রোধ করতে সমন্বিত ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার দায় আমাদের সবার।