নওগাঁর মহাদেবপুরে সড়ক প্রশস্তকরণের ৬৫ কোটি টাকা আটকে আছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। ফলে প্রকল্পের এই অংশের কাজ আর হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পট পরিবর্তনের পর প্রতিটি প্রকল্পের নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড় করা হচ্ছেনা। কিন্তু এই প্রকল্পটি অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও এর টাকা ছাড় না করায় জনদূর্ভোগ এখন চরমে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, সড়কের দুধারে কয়েকজন আ’লীগ নেতার বাড়ি ভাঙ্গা পড়বে জন্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তখন টাকা ছাড় করা হয়নি। দুবছর আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে নওগাঁ জেলা সদরের সাথে কয়েকটি উপজেলার সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প হাতে নেয়। এর আওতায় মহাদেবপুর উপজেলায় বরাদ্দ রাখা হয় ১০২ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় নওগাঁ-মহাদেবপুর-নজিপুর-ধামইরহাট-মঙ্গলবাড়ি এবং মহাদেবপুর-সরাইগাছী-পোরশা সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এরসাথে সংগতি রেখে উপজেলার অভ্যন্তরিন রাস্তাও প্রশস্তকরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অভ্যন্তরিন প্রকল্পের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে উপজেলা সদরের মাতাজী রোডের মন্দির থেকে মাছের মোড়, বকের মোড় হয়ে পোষ্ট অফিস মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা। এটি বর্তমানে এক লেনের রাস্তা। এটি মহাদেবপুর থেকে বদলগাছী উপজেলার সংযোগ সড়ক। এছাড়া উপজেলা শহরের উপর দিয়ে পোরশা উপজেলা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সংযোগ সড়ক। মাছের মোড়ের ফোয়ারার চারপাশে চার সড়ক আর বকের মোড়ের বকের ফোয়ারার চারপাশে চার সড়ক থাকলেও এই দুই মোড়ে কোন ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রায় সারাদিনই এই দুই জায়গায় যানজট লেগেই থাকে। এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প পাশ করা হয় দুবছর আগে। প্রকল্পে এই সড়কের মাছের মোড়ের মাছের ফোয়ারা ও বকের মোড়ের বকের ফোয়ারার পরিবর্তে নতুন ইন্টারসেকশন রাখা হয়। এজন্য এক লেনের সড়কের দুপাশের বিল্ডিং ভেঙ্গে প্রয়োজনীয় ভূমি হুকুম দখলের জন্য ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু সড়কের দুপাশেই কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাসভবন থাকায় এগুলো হুকুম দখলের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সরেজমিনে জানা যায়, মাছের মোড় থেকে বকের মোড়ে এই সড়ক সংলগ্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া বিতর্কীত বালু ও মাটি ব্যবসায়ী হাজী মোয়াজ্জেম হোসেনের শশুড় বাড়ি ও বহুতল বিশিষ্ট মার্কেটভবন অবস্থিত যেখানে এখন তিনি নিজেই স্বস্ত্রীক বসবাস করেন। এছাড়া বকের মোড় থেকে পোষ্ট অফিস মোড় এই সড়ক সংলগ্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন ও তার ভাইয়েদের বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি ও মার্কেট রয়েছে। এছাড়া রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম নুরানী আলালের রড সিমেন্টের দোকান ও আওয়ামী ঘরানার অটোবয়লার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের মার্কেট। এসব যাতে ভাঙ্গতে না হয়, সেজন্যই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের এই অংশের টাকা ছাড় করা হয়নি। জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগ পত্নীতলা উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, দেশের পট পরিবর্তনের পর তারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার যোগাযোগ করেও ওই টাকা ছাড় করাতে পারেননি। ওই টাকা ছাড় না হলে উপজেলার উপর দিয়ে আন্ত:জেলা সংযোগকারী সড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও মাঝ দিয়ে এই সড়ক চার লেনে উন্নীত না হওয়ায় এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাবেনা। সারাদিন যানজট লেগেই থাকবে। সওজ নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হকও জানালেন একই কথা। তিনি এলাকাবাসীর স্বার্থে ওই সড়কের বরাদ্দকরা টাকা ছাড় করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবেন বলেও জানান।