এ বছর দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৮৬ দশমিক ২৫ স্কোর পেয়ে মেধাতালিকায় ১১৭তম হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন বাউফলের আল আমিন। আল আমিন উপজেলার আদাড়ীয়া ইউনিয়নের মাদবপুর গ্রামের বাবা নিজাম উদ্দিন হাওলাদার ও মা নাজমা বেগমের ৪ সন্তানের মধ্যে মেঝ। বড় ছেলে এনামুল একটি মৎস্য প্রকল্পে মাস্টার রোলে কাজ করছেন, ৩নম্বর ছেলে মোঃ নেছারুদ্দিন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, সবার ছোট বোন জামিলা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। আল আমিন পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার গ্রামের ছোট একটা চা, পান ও ভাতের হোটেলে কাজ করে। সফলতা সম্পর্কে আল আমিন বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে আমার রোল নম্বর ছিল ১৮ আর বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন ১৫ জন ছাত্র বৃত্তির জন্য তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এ কারণে বৃত্তি পরীক্ষায় ইচ্ছা থাকলেও অংশ নিতে পারিনি। বিষয়টি আমাকে নাড়া দিয়েছিল। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে পড়াশোনা করে বড় হতে হবে। আমার বিশ্বাস, সবার দোয়ায় ভালো কিছু করতে পারব ইনশা আল্লাহ।। ’ভবিষ্যতে আলামিন পড়তে চান মেডিসিন নিয়ে। তাঁর মেডিকেলে ভর্তির খবরে স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা অনেকেই ফুল নিয়ে বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। চলছে মিষ্টিমুখ। আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুর আলম হাওলাদার বলেন, নিজাম তার সন্তানকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। আল আমিন মেধাবী ছাত্র, আমি ও আমার ইউনিয়নবাসী আনন্দিত ও গর্বিত এ সন্তানের জন্য। ব্যবসায়ী মো. নিজাম উল্লাহ বলেন, ‘এ রকম ভদ্র ও বিনয়ী স্বভাবের ভালো ছেলে বর্তমানে পাওয়া মুশকিল। আল আমিনের বাবা নিজামুদ্দিন হাওলাদার এ প্রতিনিধিকে জানান, অভাবের কারণে নিজ গ্রামের মাধবপুর নিশিকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন আল আমিন। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। এরপর বরিশাল সরকারি কলেজে ভর্তি হন। অর্থের অভাবে অন্য সহপাঠীদের মতো মেসে উঠতে পারেননি। বরিশালে থাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় কলেজে ক্লাস করতে পারেননি। কিন্তু পড়াশোনা থেকে সরে যাননি। সব সময় চিন্তা ছিল তাঁকে বড় হতে হবে। বাবা ও মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে। এ কারণে বাড়িতে বসে প্রায় এক বছর বাবার সঙ্গে নিয়মিত হোটেলে কাজ করেছেন এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেছেন। তিনি আরো বলেন, ছোট টিনের ঘর ও ভিটা ছাড়া কিছুই নেই তাঁর। অভাবের সংসার। জীবনে কোনো দিন কোনো কিছুর জন্য বায়না করেনি আল আমিন। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা খুবই ভালো, পড়তে বলা লাগেনি। হোটেলে কাজ করেছে আবার পড়াশোনাও করেছে। রোববারও দোকানে বসে পুরি ও সমুচা বানিয়েছে, ভাত বিক্রি করেছে। আল আমিন ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ায় তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই গর্বিত। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। আল আমিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘বাবায় আমার বড় ডাক্তার হউক। আমি খুবই আনন্দিত।’ মাধবপুর নিশি কান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়দেব চন্দ্র শিকারী বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় শিক্ষকদের কাছ থেকে কিছু নেওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকত আল আমিন। আমার বিশ্বাস, আল আমিন অনেক বড় মাপের চিকিৎসক হবে এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে অনেক বড় অবদান রাখবে।’