বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক দল নয়। তারা গণহত্যাকারী সিন্ডিকেট। গণহত্যাকারী দলের প্রত্যেকের বিচার হবে। এদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। তারা আমাদের নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহতায়ালা তাদের দেশ থেকে বিতারিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে আর বাংলাদেশ কবুল করবেনা। তারা অসংখ্য আলেম সমাজকে গায়েব করেছে, তাদের পরিবারের চোখের পানি আল্লাহতায়ালা কবুল করেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির বলেন, আগে গণহত্যার বিচার হোক। তারপর জনগণ রায় দেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধিকার আছে কিনা। যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যুদ্ধ এখন শুরু হয়েছে, কর্মীরা তৈরি থাকুন। আজ বাংলাদেশের মানুষ বৈষম্য চান না। তিনি বলেন, একটি নিরাপদ, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি এই বার্তা প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের আহবান করেছেন। মহানগর জামায়াতের আমির জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবরের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আব্দুল হালিম, মুয়াজ্জেম হোসাইন হেলাল, জেলা আমির আব্দুল জব্বার উপস্থিত ছিলেন। ২০০৫ সালের পর মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে বরিশাল জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অনেকেই আমার কাছে প্রশ্ন করছেন আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচনে অশংগ্রহণ করতে পারবে কিনা। তাদের আমি বলেছি, আগে গণহত্যার বিচার হোক, তারপরে ক্ষতিগ্রস্থরাই রায় দেবে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করার অধিকার রাখে কিনা। রাজনীতির নাম যদি গণহত্যা হয় তাহলে এমন দল বাংলাদেশের জনগন বরদাস্ত করবে না। আর রাজনীতির নাম যদি জনকল্যান হয়, তাহলে জনগন যাকে পছন্দ করবে তাকে বরন করে নেবেন। আওয়ামী লীগ প্রমান করেছে তারা কোন রাজনৈতিক দল নয়, তারা একটি গণহত্যার সিন্ডিকেট। তারা সবচেয়ে বেশি কস্ট দিয়েছে জামায়াত ইসলামকে। কোরানের পাখিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। গত ১ আগস্ট আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মাত্র চারদিনের মধ্যে মানুষের মনে তাদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। আমিরে জামায়াত আরও বলেন, চাঁদাবাজ, লুন্ঠনকারী, দখলকারীদের আর বাংলাদেশ কবুল করবে না। জাতীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জামায়াতের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন দাবির প্রেক্ষিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমিও চাই বরিশাল থেকে ভোলায় সেতু যাবে, ভোলাবাসী কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। তেমনি ভোলা থেকে গ্যাস বরিশালসহ সারাবাংলাদেশে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ বৈষম্য চায়না। বরিশালে যেসব সমস্যাগুলো সমাধান হয়নি, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বর্তমান সরকারের শুরু করতে হবে। আমরা পুরোবরিশাল বিভাগকে উন্নত হিসেবে দেখতে চাই। তিনি আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা যদি এই জমিনের খেদমত করার সুযোগ দেন, তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সকল সমস্যা সমাধান করা হবে। ফ্যাসিবাদ বিদায়ের শেষ আন্দোলনটা রাজনীতির ছিলোনা। এই আন্দোলনটা ছিলো ছাত্র, যুবক ও তরুনদের। তাই সকল গণহত্যাকারীদের বিচার করার জন্যও জামায়াতের আমির সরকারের কাছে জোর দাবি করেছেন। ইসলামি দলগুলো ভোটকেন্দ্রে একটি বাক্স পাঠাতে চায় \ দেশের ইসলামি দলগুলোর ঐক্য প্রসঙ্গে জনসাধারণের কাছে দোয়া চেয়েছেন জামায়াত ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তারা জানিয়েছেন, ইসলামি দলগুলো ভোটকেন্দ্রে একটি বাক্স পাঠানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই মাদরাসা পরিদর্শনকালে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান ও চরমোনাই পীর রেজাউল করীম যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা মূলত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা দেখতে চাই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন হতে দেবো না। তাই যথাযথ সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে শতকরা ৯১ জন নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বাকি ৯ ভাগের মধ্যে কিছু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও কিছু নাস্তিকও থাকতে পারে। সবমিলিয়ে এই বাংলাদেশ আমাদের। জামায়াতের আমীর বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্ণ হলেও আমরা স্বাধীন দেশের মর্যাদা পাইনি। এর মূল কারণ হলো দুর্নীতি ও দুঃশাসন। যেখানে আল্লাহর বিধান থাকবে না, সেখানে দুর্নীতি ও অশাসন আসবেই। নামাজের বিধান মেনে যদি আমরা সমাজে আল্লাহর বিধান মানতাম, তাহলে দেশ এভাবে অবস্থা পেত না। কিছু মানা ও কিছু না মানার কারণে দেশ এই অবস্থায় এসেছে। আমরা পুরোপুরি আল্লাহর বিধান মেনে চলতে চাই, তাই আমরা সারাদেশবাসীর সহযোগিতা চাই। তিনি আরো বলেন, আমাদের মিলনমেলা আল্লাহর জন্য। এই মিলন রাজনীতির মাঠেও থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। জনগণের প্রত্যাশা, নির্বাচনের সবকেন্দ্রে ইসলামী দলগুলোর যেন একটি বাক্স থাকে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন তা শেষ হলে নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগের সকল ষড়যন্ত্র অতীতে ব্যর্থ হয়েছে, ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হবে। ভারত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। আমরা ভারতের কাছ থেকে আশা করি কাটাতারের বেড়া যেন না থাকে। এটি আমাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই দ্রব্যমূল্য দ্রুত কমে আসুক। এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, নির্বাচনের সময় ইসলামের পক্ষে একটি বাক্স কেন্দ্রে পাঠানোর প্রচেষ্টা আগেও ছিল, এখনও চলছে। বিভিন্ন কৌশলে গত ৫৩ বছর ইসলামী দলগুলোকে দূরে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট নতুন স্বাধীনতার মাধ্যমে ইসলামী পক্ষের জন্য একটি ভাল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তবে যদি আমরা সময়োপযোগী বিচার না করি, তবে তা আমাদের জন্য অকল্যাণকর হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন এই দুই দল চায়। সবশেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান চরমোনাইর প্রথম পীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাকের কবর জিয়ারত করেন। পরে দুপুরে খাবার গ্রহণ শেষে ডা. শফিকুর রহমান বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে যোগদান করেছেন।