সৈয়দপুরে নতুন আলুর বাজার দামে চাষিরা দিশেহারা

এফএনএস (ওবায়দুল ইসলাম; সৈয়দপুর, নীলফামারী) : | প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম
সৈয়দপুরে নতুন আলুর বাজার দামে চাষিরা দিশেহারা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেরিতে নতুন আলুর চাষ করেছে চাষিরা। তারা আলুর বীজ ক্রয় করেছে চড়া দামে। এক কেজি আলু বীজ ক্রয় করতে হয়েছে প্রায় একশো টাকা। চাষিদের ধারণা ছিল এ বছর আলুর দাম ছিল অনেক চড়া। হয়তো আলুর এমন দাম নাও কমতে পারে। এমন চিন্তা ভাবনা মাথায় নিয়ে অনেকটা শংকার মধ্যে চড়া দামে বীজ ক্রয় করে জমিতে আলু রোপন করেছেন। বর্তমানে আলুর ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু হঠাৎ করে বাজার দরে ধস নামে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ টাকা টাকা। আবার কোথাও কোথাও কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা। আলুর এ বাজার দামে চাষিরা দিশেহারা। তাদের বীজ ক্রয় করতে হয়েছে একশো টাকা। এখন আলুর কেজি ২০ টাকা। কেমন করে ধার দেনা পরিশোধ করবেন এমন দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন আলু চাষিরা। কেউ কেউ আলু জমি থেকে উত্তোলন করলেও অনেকেই আলু রেখেছেন জমিতেই। কারণ উত্তোলন খরচ না উঠায় আলু নিয়ে বিপাকে চাষিরা। সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চাষি নয়ন সরকার বলেন,হাট-বাজারে আলুর দাম কমায় তারা পড়েছেন লোকসানের মুখে। নতুন আলু বিক্রির লাভের টাকা ঢ়ুকছে পাইকারের পকেটে। তবে এ সময়ে অল্পদামে আলু পেয়ে ভোক্তারা বেজায় খুশি। কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই এলাকার কৃষক শাহাদাৎ হোসেন জানান,এবার আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে,অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আগাম আলু চাষে ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ। এবার উৎপাদন খরচ না উঠলে আগামী মৌসুমে অনেক কৃষকই আগাম আলু চাষ করতে আগ্রহী হবেন না। সৈয়দপুর কুন্দল বাজারের পাইকার রফিকুল ইসলাম বলেন,তিনি এখন প্রতিদিন ২০ টাকা কেজি দরে নতুন আলু বিক্রি করছেন। তিনি খুচরা পাইকারের মাধ্যমে আলু সংগ্রহ করেছেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পাল্লা। আবার খুচরা পাইকাররা কৃষকের নিকট থেকে আলু কিনেছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা পাল্লা। এভাবে হাতবদল হয়ে আলু আসে বাজারে। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের হাট-বাজারে আলুর দাম আরও কম। লালপাকড়ি,কার্ডিনাল,সাদাহল্যান্ড ও বার্মা জাতের নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে এখানকার হাট-বাজারে। আগাম উৎপাদিত এই আলুগুলো কৃষকরা ২০ টাকা কেজির কমে বিক্রি করলে লোকসানে পড়বেন। কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন,আগাম রোপণের কারণে বেশি দামে বীজ আলু কিনতে হয়েছে। এর সঙ্গে, সার-কীটনাশক, সেচ ও দিনমজুর খরচ মেলালে এলাকা ভেদে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে প্রায় একশো টাকা। কিন্তু নতুন আলুর দাম যেভাবে কমেছে তাতে উৎপাদন খরচ তোলাই দায়। মোকলেছুর রহমান জানান,আগাম আলু চাষে কৃষকদের স্বপ্ন ছিল এবার নতুন আলু বিক্রি করে বিঘায় লাভ করবেন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু দাম কমে আসায় কৃষকের সেই স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার বাংগালীপুর ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, লোকসান যাতে কম হয় সেজন্য ক্ষেতের আলু দ্রুত উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। যার কারণে হাট-বাজারগুলোতে নতুন আলুর সরবরাহ বেড়েছে। ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, এক মাস আগেই আলু কিনেছেন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। আর এখন নতুন আলু পাচ্ছেন ২০ টাকা কেজি কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, সৈয়দপুর  উপজেলায় আগাম জাতের আলুর চাষ করা হয়েছে ১৯৮ হেক্টর জমিতে। দেরিতে লাগানো হয়েছে ১১৩১ হেক্টর জমিতে। এবার আলুর ফলন হয়েছে বাম্পার। ইতিমধ্যে কৃষকরা নতুন আলু বিক্রি শুরু করেছেন। বোতলাগাড়ী গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আগাম চাষের জন্য প্রতিকেজি বীজ আলু কিনতে হয়েছে ১শ থেকে ১২০ টাকায়। কিন্তু নতুন আলু বিক্রি করে উপযুক্ত দাম পাচ্ছি না। তিনি বলেন দিনে দিনে কমছে আলুর দাম। এমন বাজার মূল্য অব্যাহত থাকলে আগাম আলুতে নিশ্চিত লোকসান গুণতে হবে। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভুষন বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশী সবজী চাষ হয় বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের মধ্যে বেশী চাষ হয় শ্বাসকান্দর গ্রামে। এরপর বোতলাগাড়ী ও সোনাখুলিতে। সবজির চাহিদা বাৎসরিক সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিকটন। অথচ এখানে আলুসহ গোটা বছরজুড়েই বিভিন্ন ধরণের সবজি উৎপাদন হয় প্রচুর পরিমানে। মৌসুম সময়ে এসব সবজির উপযুক্ত মূল্য না পেলে কৃষকরা চাষাবাদে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। এজন্য সবজি হিমাগার স্থাপনসহ উৎপাদিত সবজি রপ্তানির উদ্যোগ নিলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে