তারেক রহমান

রাষ্ট্রীয় সহায়তায় দল গঠন করলে জনগণ হতাশ হবে: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম | প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৫৯ পিএম
রাষ্ট্রীয় সহায়তায় দল গঠন করলে জনগণ হতাশ হবে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউশনে শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বললেন, নির্বাচনই জনগণের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিতের একমাত্র উপায়। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা মানে পরাজিত ফ্যাসিস্টদের সহায়তা করা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে বিএনপি অবশ্যই স্বাগত জানাবে। তবে, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেন তাহলে জনগণ মেনে নেবে না। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একটি শিক্ষক সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়া তারেক রহমান তার বক্তৃতায় নির্বাচন, সংস্কার, তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন।

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক
এদিনের বক্তৃতায় তারেক রহমান নির্বাচন নিয়ে যেসব বিতর্ক তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, "নির্বাচনই জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রধান হাতিয়ার। তবে যদি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়, তা আমাদের অজান্তে পলাতক ফ্যাসিস্টদের শক্তিশালী করবে।" তারেক আরও বলেন, "বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ দেওয়া উচিত নয়, কারণ জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই রাজনীতি করতে হবে।"

এখানেই থেমে না থেকে তিনি আরো বলেন, "নির্বাচন ও সংস্কার—দুটিই বিএনপির জন্য জরুরি। কিন্তু যারা এই দুটি বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে, তাদের উদ্দেশ্য কিছুটা সন্দেহজনক হতে পারে।" তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ নিয়েই বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং তা সমাধান করতে নির্বাচন বা সংস্কার নয়, বরং জনগণের আসল সমস্যা সমাধানে নজর দেওয়া উচিত।

সংস্কার ও নির্বাচনের গুরুত্ব
তারেক রহমান বলেন, "দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে এখন নির্বাচন বা সংস্কারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার চালানো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভ্যাটের বোঝা এবং বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনে নীরব হাহাকার চলছে।" 

তিনি এও বলেন, "যতদিন বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে, দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনগণের হাতে খাবারের পয়সা না পৌঁছানো যায়, ততদিন কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক বা সংস্কার হবে না।"

তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ
একই সঙ্গে, তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের গুরুত্বেও তারেক রহমান গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আজকের তরুণেরা যে রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে, সেটি ইতিবাচক দিক। গত দেড় দশক ধরে তারা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি, কিন্তু এখন যদি তারা নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তাহলে বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।” 

তবে তিনি এই তরুণদের কাছে আবেদন করেন, “রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক সহায়তা গ্রহণ করবেন না, কারণ তা জনগণের কাছে হতাশার কারণ হয়ে উঠবে।” তিনি আরও বলেন, "পথটি স্বচ্ছ হতে হবে এবং এটি কোন প্রশ্নবিদ্ধ পথে না গিয়ে সুস্থ রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।" 

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম
তারেক রহমান আরো বলেন, “যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, আমরা একটি নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করব এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো গড়ে তুলব।” তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করা সময়ের অপচয়।” 

তিনি সরকারকে আরও বলেন, “যদি জনগণ কোনো বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতা মেনে নিলেও তা থেকে ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ না আসে, তবে জনগণ যথাযথভাবে তার প্রতিবাদ জানাবে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়া।”

পলাতক ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা
তারেক রহমান তার বক্তৃতায় পলাতক ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে এক সতর্কবার্তা দিয়েছেন, “যদি আমরা নির্বাচনের প্রসঙ্গ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করি, তা আমাদের অজান্তেই সেই ফ্যাসিস্টদের শক্তিশালী করবে।” তিনি অতীতের স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে এক বিশদ বক্তব্যে বলেন, "পলাতক স্বৈরাচারীরা তাদের ইচ্ছেমতো দেশের সংবিধানকে পরিবর্তন করে নিজেদের সুবিধা অনুসারে তা দলীয় সংবিধানে রূপান্তরিত করেছে। এমনকি তারা নির্বাচন কমিশন ও দুদককে অকার্যকর করে ফেলেছিল।"

শিক্ষকদের ভূমিকা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “শিক্ষকরা দেশের শিরদাঁড়া, তাদের জন্য আমরা একটি বিশেষ কমিশন গঠন করতে চাই। শিক্ষাব্যবস্থা হবে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে।” তিনি শিক্ষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি BNP’র ইতিবাচক ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, বরকত উল্লাহ বুলু এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়া, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া এবং জাতীয় সম্মেলনের অন্যান্য অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ বক্তৃতা থেকে স্পষ্ট যে, বিএনপি নির্বাচনে ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনায় জনগণের অধিকারের কথা তুলে ধরতে চায়, পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমকে আরো কার্যকর এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ করার বিষয়ে অবিচল রয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে